কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯০ শতাংশ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আর উত্তরের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা দাবি করেছেন, জনগণ আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাই ‘সাফল্যের সঙ্গে’ এই বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন দুজন।
বেলা দুইটার দিকে বর্জ্য অপসারণ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন সাঈদ খোকন। নগর ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব। সেই কাজ অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় আজ এবং আগামীকালও কোরবানি হবে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বর্জ্য থাকবে, ততক্ষণ পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে থাকবে। আমরা শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে বর্জ্যমুক্ত নগরী উপহার দেব।’
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেট্রিক টন কোরবানির বর্জ্য হবে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। কাল শুক্রবারও কোরবানি হবে, তাই কাঙ্ক্ষিত ২০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করে আমরা নগরবাসীকে শতভাগ পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ।
স্থপতি মোবাশ্বর হোসেন বলেন, ‘চেষ্টা করলে সম্ভব, এটা মেয়র সাঈদ খোকন প্রমাণ করেছেন। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত নগর ভবনে উপস্থিত থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। আশা করছি অন্যান্য সমস্যা নিরসনে তিনি তৎপর হবেন।’
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশন সন্তোষজনক কাজ করেছে। এটি প্রশংসনীয়, তবে নাগরিকেরা কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করেননি। আশা করছি আগামীবার তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন হবেন।
জনগণ আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে
কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ‘চ্যালেঞ্জিং কাজ’ হিসেবে তুলনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেছেন, পূর্বঘোষিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে তাঁরা এ কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এবং বর্জ্য ব্যাগ এবং ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার বেড়েছে।
গুলশানে সিটি করপোরেশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন জামাল মোস্তফা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় প্রথম দিনে আনুমানিক ২ লাখ ১৫ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। ডিএনসিসির ১৮৩টি পশু জবাইর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসিক কমপ্লেক্সের ভেতরে উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত ৩৬৬টি স্থানসহ মোট ৫৪৯টি স্থানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানিতে জনগণের সাড়া ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা। ছবি: ডিএনসিসির সৌজন্যে পাওয়াপ্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে ৭, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডকে কোরবানি পশুর বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ওয়ার্ডকেও বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসটিএস এবং নির্ধারিত স্থানে কন্টেইনারে বর্জ্য জমা হওয়ার পরপরই তা ল্যান্ডফিলে পরিবহনের কাজ শুরু হয়।
জামাল মোস্তফা বলেন, পরিচ্ছন্নতা কাজে ২৮০টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত ছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিজস্ব ২ হাজার ৭০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সর্বমোট ৯ হাজার ৫০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিরলস পরিশ্রম করে ঢাকা শহরকে আবর্জনামুক্ত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন, তারেকুজ্জমান রাজিব, ডা. জিন্নাত আলী, দেওয়ান আব্দুল মান্নান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।