ম্প্রতি সার্জেন্ট পদে লোক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়েছে ১০ জানুয়ারির ইত্তেফাক পত্রিকায়। নারী ও পুরুষ উভয় প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত পাওয়া যাবে (www.police.gov.bd/recruitment/Sgt%20Ad.jpg) লিংকে।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগের এআইজি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে স্নাতক। থাকতে হবে মোটরসাইকেল ড্রাইভিং ও কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা। ১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে সাধারণ ও অন্যান্য কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৯ থেকে ২৭ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৯ থেকে ৩২ বছর। শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি, প্রসারিত অবস্থায় ৩৪ ইঞ্চি হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি, প্রসারিত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি হতে হবে। নারী প্রার্থীদের (সব কোটার ক্ষেত্রে) উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি থাকতে হবে। বডি মাস ইনডেক্স অনুযায়ী উচ্চতার সঙ্গে ওজনের সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। প্রার্থীকে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক ও অবিবাহিত হতে হবে। তালাকপ্রাপ্ত পুরুষ বা নারীরা আবেদন করতে পারবেন না।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, এবার ৪০০ থেকে ৫০০ জন সার্জেন্ট নিয়োগ হতে পারে। তিনটি ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে থাকে—শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।
শারীরিক পরীক্ষার সময় সূচি :
১৩ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় আট রেঞ্জের প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা হবে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ বা রেঞ্জের প্রার্থীদের পরীক্ষা ১৩ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ বা রেঞ্জের ১৪ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ বা রেঞ্জের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগ বা রেঞ্জের পরীক্ষা হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি।
যা যা লাগবে :
শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ, সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের দেওয়া মূল চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব সনদের মূল কপি, প্রার্থীর পরিচয়পত্রের মূল কপি, না থাকলে পিতা বা মাতার পরিচয়পত্রের মূল কপি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা সত্যায়িত সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি রঙিন ছবি সঙ্গে আনতে হবে। আরও লাগবে মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং এমএস অফিস, ইন্টারনেট ও ট্রাবলশ্যুটিংয়ের ওপর তিন সপ্তাহের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার মূল সনদ। কোটায় আবেদনকারীদের জন্য লাগবে সংশ্লিষ্ট কোটার সনদের মূল কপি এবং তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্র।
শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ওই দিন তিন টাকা দিয়ে ফরম কিনতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকার অনুকূলে যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে পরীক্ষা ফি বাবদ ৩০০ টাকা ‘১-২২১১-০০০০-২০৩১’ নম্বর কোডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে চালানের মূলকপি যুক্ত করতে হবে।
প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আবেদন ফরম পূরণ করে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এআইজি, রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স, ঢাকা বরাবর পাঠাতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাঠানো হবে।
শারীরিক পরীক্ষার প্রস্তুতি :
মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, শারীরিক পরীক্ষায় প্রার্থীকে দৌড়, জাম্পিং ও রোপ ক্লাইমিং পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শারীরিক মাপ পরীক্ষায় উচ্চতা, বুকের প্রস্থ, বয়সের সঙ্গে ওজনের সামঞ্জস্য দেখা হয়। প্রার্থীর ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য দৌড়, জাম্পিং, রোপ ক্লাইমিংয়ে অংশ নিতে হয়। এ সময় ব্যায়ামের উপযোগী ঢিলেঢালা পোশাক সঙ্গে রাখতে হবে। আগে থেকেই নিতে হবে শারীরিক প্রস্তুতিও।
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব্ব পরীক্ষা:
লিখিত পরীক্ষা হয় ২৫০ নম্বরের। ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশনে থাকে ১০০ নম্বর। সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিতে ১০০ নম্বর এবং মনস্তত্ত্বে থাকে ৫০ নম্বর। এ পরীক্ষায় সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী প্রশ্ন করা হয়। তবে এসএসসি লেভেলের প্রশ্ন বেশি থাকে।
প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন বলেন, প্রশ্নে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে ধরন ঠিক থাকবে। ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন ১১ মার্চ এবং সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিত পরীক্ষা হবে ১২ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত।
মনস্তত্ত্ব্ব পরীক্ষা :
মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা হবে ১০ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। আইকিউ ও কুইজ টাইপের প্রশ্ন থাকতে পারে মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায়। সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য শব্দ বা সংখ্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যার সমাধান, সম্পর্ক নির্ণয়, গাণিতিক যুক্তি অভীক্ষা, ভাইরাল রিজনিং, সাধারণ জ্ঞান (পূর্ণরূপ, সঠিক উত্তর, সংক্ষিপ্ত টিকা) থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় গাণিতিক ধাঁধা থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। যেমন—এক সপ্তাহ আগে অমিত বলেছিল, গত পরশু তার জন্মদিন। আজ শুক্রবার হলে তার জন্মদিন কী বার ছিল?
মনস্তত্ত্ব অংশে ভালো করতে হলে বারবার চর্চা করতে হবে। বিসিএস লিখিত মানসিক দক্ষতা অংশ ও সার্জেন্ট রিক্রুটিং গাইডের মনস্তত্ত্ব অংশ অনুশীলন করলে ভালো ফল পাবেন।
ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন:
১০০ নম্বরের মধ্যে ইংরেজিতে ৫০, বাকি ৫০ থাকে বাংলা রচনা ও কম্পোজিশনে। বিগত নিয়োগ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইংরেজি অংশে সাধারণত ১৫ নম্বরের একটি রচনা আসে। ১০ নম্বরের আসে phrase and idioms, এগুলো দিয়ে অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি করতে হয়। ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখতে হয়, এতে থাকে ১০ নম্বর। Fill in the blanks থাকে ৫ নম্বরের। এ ছাড়া থাকে translation, এতে বরাদ্দ ১০ নম্বর। ইংরেজি অংশের জন্য কাজে আসবে প্রফেসরস প্রকাশনীর ‘ইংলিশ ফর কম্পিটেটিপ এক্সাম’ ও পিসি দাশের ‘অ্যাপলাইড ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন’ বই দুটি।
বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন অংশেও ১৫ নম্বরের একটি রচনা লিখতে হয়। বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি করতে বলা হয়। এতে থাকে ১০ নম্বর। ভাব সম্প্রসারণে থাকে ১০। এককথায় প্রকাশে থাকে ৫ নম্বর ও বঙ্গানুবাদে থাকে ১০ নম্বর। এ অংশের জন্য বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বাংলা বই ও হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ বইটি কাজে আসবে।
সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিত:
পাটিগণিতে ৫০ ও সাধারণ জ্ঞানে ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। সাধারণত আলোচিত ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংবিধান, ঐতিহাসিক স্থান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বরাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন হতে দেখা যায়। বহুল আলোচিত সাম্প্রতিক বিষয় থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের পাশাপাশি বর্ণনামূলক প্রশ্নও আসে। টিকা, এককথায় প্রকাশও থাকতে পারে। এ অংশে ভালো করতে হলে আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব, এমপি থ্রি, তথ্যকোষ প্রভৃতি সাধারণ জ্ঞানের বই এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড প্রভৃতি তথ্যভিত্তিক মাসিক সাময়িকী দেখতে পারেন।
পাটিগণিত অংশে পাঁচটি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০। শতকরা, ঐকিক নিয়ম, লাভক্ষতি, ল.সা.গু-গ.সা.গু, সরল, মান নির্ণয়, সুদ কষা, উৎপাদক ইত্যাদি বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। তবে অনেক সময় বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকেও প্রশ্ন হতে দেখা যায়। এ অংশে ভালো করার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের পাটিগণিত অংশ আয়ত্তে রাখতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষা:
মনস্তত্ত্ব ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষার স্থান, তারিখ যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। মৌখিক পরীক্ষায় যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে, নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই।
মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, মৌখিক পরীক্ষায় দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্নাতক পর্যায়ে পড়া বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হতে পারে। এ ছাড়া সাইকোলজি ও মেন্টাল গ্রোথ যাচাই করা হতে পারে।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা:
নিয়োগপ্রাপ্তদের ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেড অনুযায়ী ১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া রয়েছে ট্রাফিক ভাতা, বিনামূল্যে পোশাক, ঝুঁকি ভাতা, স্বল্পমূল্যে রেশন ও চিকিৎসা সুবিধা। থাকবে নিয়মানুযায়ী উচ্চ পদে পদোন্নতিসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ।