কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে যেতে সদরঘাটে লঞ্চের কেবিনের টিকিটের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও মেলাতে পারছেন না কেবিনের টিকিট। অনেকেই মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। পাবেন কিনা তাও জানেন না।
সোমবার (২০ আগস্ট) বিকাল থেকেই সদরঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। যাত্রীর চাপ দেখে লঞ্চ কর্মচারীদের কেউ কেউ দ্বিগুণ টাকা নিয়ে কেবিন ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পিরোজপুর যাওয়ার উদ্দেশে পরিবার নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়েছিলেন ব্যবসায়ী ইমদাদুল ইসলাম। বেলা ১১টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছান তিনি। কিন্তু তিন ঘণ্টা চেষ্টা করেও পিরোজপুর রুটের কোনো লঞ্চে কেবিনের টিকিট পাননি। তাই বাধ্য হয়ে রাজদূত-৭ লঞ্চে সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে কেবিন নেন। নরমাল সময়ে এ টিকিটের দাম আড়াই হাজার টাকা।
ইমদাদুল বলেন, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি যাবো বলে রওনা দিয়েছি। কিন্তু সদরঘাটে পৌঁছে দেখি কেবিন সব বুক। তাই বাধ্য হয়ে লঞ্চের এক কর্মচারীকে ধরে সাড়ে চার হাজার টাকায় ছোট কেবিন নিয়েছি।
হাবিব নামে লঞ্চের এক কর্মচারীর বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে বলেন, শেষ সময়ে উপচে পড়া ভিড়ে কেবিন তো দূরের কথা ডেকে বা ছাদেও দাাঁড়ানের জায়গা নেই। তবে ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ রাখা কেবিনের যাত্রীরা না আসলে কিছু বেশি নিয়ে সেটি দেয়া হচ্ছে। এতে কারও অভিযোগ নেই বলে জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ি থেকে মা-বোন নিয়ে সদরঘাটে এসেছেন ইসমালই হোসেন। দুপুর ১২টায় পৌঁছে বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করেও মেলেনি কেবিনের টিকিট।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বরগুনার কয়েকটি লঞ্চে কেবিনের চেষ্টা করেছি। ঈদের আগে সব কেবিন নাকি ভাড়া হয়ে গেছে। দুই-একটি লঞ্চে ছোট কেবিন পেলেও অনেক বেশি টাকা চায়।
এদিকে, প্রতিটি লঞ্চের ডেকের ভিতরে, ছাদে ও অন্যান্য স্থানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিছানা চাদর, মাদুর বা গামছা-লুঙ্গি বিছিয়ে যেভাবে পরছেন জায়গা দখল করে বসে পড়েছেন। কেউ আবার লঞ্চের কোনো স্থানে একটু দাঁড়ানোর সুযোগ পেলেই ঘাপটি মেরে থাকছেন। অনেকে আবার পরিবার নিয়ে লঞ্চে উঠে দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে নেমে পড়ছেন।
পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে লঞ্চের ডেকে বসে ছিলেন খলিল ব্যাপারী। তার ছোট দুই সন্তান থাকায় আগেই এসে ডেকের মধ্যে চাদর বিছিয়ে জায়গা দখল করেছেন। পরিবার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় অনেক আনন্দিত বলে জানান তিনি।
বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সদরঘাটে পরিদর্শনে আসা নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, বাড়তি ভাড়া নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি অভিযোগ পাওয়া যায় তবে রুট পারমিট বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য কয়েকটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, এবার ঈদ যাত্রায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সার্বিক প্রস্তুতি ভালো। ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ যাতায়াত করতে পারছে। বাড়তি চাপ মোকাবেলায় এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর দেড়শর বেশি বেসরকারি লঞ্চ চলাচল করছে। ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন সরকারি-বেসরকরি প্রায় ১৩০ লঞ্চ চলাচল করবে।
সোমবার গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তা ও হয়রানি বন্ধে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাতে কোনো লঞ্চ ছাড়তে না পারে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।