অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার অবস্থা স্থিতিশীল। হাসপাতাল সুত্র জানিয়েছে, এমআরআই রিপোর্টে তার মেরুদন্ডে সমস্যা ধরা পড়ায় পুলিশী হেফাজতে তাকে ভর্তি করা হয়।
গত ৩ আগষ্ট নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনে ফেসবুকে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে দুই দফায় ৬ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। সোমবার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আদালত তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেন। প্রাথমিকভাবে নওশাবা ডিসেন্ট্রি, পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তাররা তার হার্ট, কিডনীসহ অন্য কোন সমস্যা আছে কি-না তা জানতে বেশকিছু পরীক্ষা- নীরিক্ষা করানো হয়েছে। তার কিডনী ও এ সংক্রান্ত অন্য কোন ধরনের সমস্যা আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পরই বলা যাবে নওশাবার স্বাস্থ্যর সর্বশেষ অবস্থা।
এদিকে নওশাবাকে নিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে জটিলতা তৈরী হয়েছে। ভর্তির পর রাতভর নানা পেশার মানুষের আনাগোনায় ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেকটা নির্ঘুম রাত কেটেছে। সেলিব্রেটি হওয়ায় হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও বাইরে থেকে লোকজন তাকে দেখতে আসেন। ২০৪ নম্বর নিউরো সার্জারী ওয়ার্ড সোমবার রাতভর কার্যত লোকারণ্য হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার ভীড় সামলাতে কতর্ব্যরত পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নওশাবাকে হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষে নেয়ার সময়ও ভীড় জমে যায়। তাকে নিয়ে চিকিৎসক এবং পুলিশ সদস্যরা অনেকটা হাপিয়ে উঠেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে দুপুর আড়াইটার দিকে নিউরো সার্জারী ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের পুরনো ভবনের তৃতীয় তলার ৪৬ নম্বর কেবিনে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রাজারবাগ থেকে ৪ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নওশাবার খোঁজ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে গেলে ২০ নম্বর বেডটি খালী দেখা যায়। কতর্ব্যরত নার্স এবং রোগীর স্বজনরা জানান, হুইল চেয়ারে করে তাকে দুপুর আড়াইটার দিকে নওশাবাকে তৃতীয় তলার ৪৬ নম্বর কেবিনে নেয়া হয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন পুলিশ সদস্য তার পাহারায় রয়েছেন।
২০৪ ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন এ প্রতিবেদককে বলেন, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে একজন প্যান্ট ও গেঞ্জিপরা মহিলাকে ২০ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। রাতভর তাকে দুজন মহিলা পুলিশ পাহারা দিয়েছে। পরে শুনেছি ওই রোগী একজন নায়িকা। তারা বলেন, এরপর থেকে রাতে শুধু তারে দেখতে মানুষ আসতেই থাকে। যারা এসেছিল তারা খাবারও নিয়ে এসেছিল। লোকজনের আনাগোনা বেশী থাকায় আমরা ঘুমাতে পারিনি।
ওই বেডের আশপাশের আরেকজন রোগী এ প্রতিবেদককে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তারজন্য (নওশাবা) দুইটা বেড এক করে রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। রাতে একাধিকবার ডাক্তার এসে দেখে যান। ডাক্তার, পুলিশের লোকজন ছাড়াও আরো অনেক লোক আসে। রাত ৩টা বাজেও লোকজন আসতেই ছিলো। রাতে নওশাবা কি কারো সাথে কথা বলেছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার সাথে একটি মেয়ে ছিলো। আর কোনায় বসে ছিলো দুজন নারী পুলিশ সদস্য। তারা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আর নায়িকা এবং ওই মেয়ে দুজনে খুব আস্তে কথা বলেছে। তাদের কথা কিছুই শুনতে পাইনি। তিনি বলেন, তার মেরুদন্ডে সমস্যা আগের সমস্যা ছিলো বলে জেনেছি। কিন্তু তিনি একাই হেটে গেছেন। সকালে ডিম রুটি দিয়ে নাস্তা করেছেন বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি’র ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমদকে আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন রিমান্ডের আসামী নন।
এরআগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগের ইউনিট- ৩ এর সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এর কাছে নওশাবার স্বাস্থ্যর সর্বশেষ অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, তার হার্টে কোন ধরনের সমস্যা আছে কিনা সেজন্য ইসিজি করা হয়েছে। ইসিজি তে তেমন সমস্যা পাওয়া যায়নি। এছাড়া কিডনীতে কোন ধরনের সমস্যা আছে কিনা তার জন্য ৩টি ব্লাড টেষ্ট করতে দেয়া হয়েছে। এক্সরে করা হয়েছে। তবে সেটি অষ্পষ্ট হওয়ায় সেটি রেডিওলজি বিভাগে পাঠানো হযেছে। আগামী বৃহস্পতিবার এসবের রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য কাজী নওশাবা আহমদ একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী এবং মডেল। তিনি শহীদ আনোয়ারা গালর্স স্কুল, হলি ক্রস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় লেখাপড়া করেছেন বলে জানা গেছে।
এরআগে সোমবার দুপুরে তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির কর্মকর্তারা নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হলেও রাত সোয়া ১০টার দিকে নওশাবাকে আবারো হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন ডিবির সহকারী সাব ইন্সপেক্টর আবু বক্কর সিদ্দিক।