ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সামনে থেকে মঙ্গলবার রাতে ওই হলের আবাসিক ছাত্রী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকত্তোর শ্রেণির ছাত্রী।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত আটটার পর শামসুন নাহার হলের সামনে থেকে তাসনিমকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সনাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার অপরাধ বিভাগে হস্তান্তর করা হবে।
রাতে যোগযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষার্থীকে ডিবি নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা অবহিত আছি।’
শোক দিবসের আলোচনা সভা শেষে আগত নেতাদের প্রটোকল দেয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে এ ঘটনা ঘটে।
সকালে শোক দিবস উপলক্ষে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, টিএসসি মিলনায়তনে সমাবেশ শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সাথে কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বের হয়ে যান। এতে পিছনে পড়ে যান ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত। এদিকে নানকের সাথে বাকিরা থাকায় তাদের অনুসারীদের উপস্থিতিতে সেখানে বিরাট জটলা বেঁধে যায়। এ জটলার কারণে সনজিত টিএসসি থেকে বের হতে পারছিলেন না। বের হওয়ার সময় একুশে হলের একজনের সাথে ধাক্কা লাগায় সনজিত তাকে থাপ্পড় দেন। নানক চলে যাওয়ার পরে সনজিত শোভনকে বলেন, আপনার ছেলেদের কোনো ম্যানার শেখান নাই? তারা আমাকে বের হওয়ার জায়গা দেয় নাই কেন? এসময় সূর্যসেন হলের আসলাম নামক একজন তার প্রতিবাদ করে বলেন, কী ম্যানার শেখাতে হবে? তখন সনজিত আসলামকে মারধর করেন। এরপরেই দুই গ্রুপের নেতাকর্মীর মধ্যে মারামারি শুরু হয়। প্রায় ১৫ মিনিটের মতো এ হাতাহাতি ও মারামারি চলে।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, টিএসসি প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়ায়। ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দেখা গেছে। তবে, ছাত্রলীগের শীর্ষ এ চার নেতার কাউকেই হাতাহাতি থামাতে দেখা যায় নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমি আর শোভন ভাই কথা বলছিলাম। এসময় বাইরের কয়েকজন এসে সেখানে চিল্লাচিল্লি করছিল। আমরা তাদের চিনি না। কেউই চিনে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হতেও পারে নাও হতে পারে। আমি শিউর না। পোলাপানের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল, তারা ওদেরকে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের থামিয়ে দিয়েছি। পরে ২ জনকে মারধরের বিষয়ে জানতে তাকে আবার কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদেরকে সাদ্দাম জানিয়েছেন যে হাতাহাতিতে জড়ানোরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মী। তবে তিনি ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতির বিষয়ে অস্বীকার করেছেন। যদিও প্রমাণ দেয়ার পরে স্বীকার করেন তিনি।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, টিএসসিতে গোলযোগ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জুনিয়রদের মধ্যে মনে হয় কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে সিনিয়ররা কিছুই করেনি। আমরা তা দেখিনি। গোলযোগের সময়ে আমরা সেখানে ছিলাম না। আমরা আসার পরে তা হয়ে থাকতে পারে। ভিডিওতে আপনাদের দেখা যাচ্ছে বললে তারপর তিনি উপস্থিতির কথা স্বীকার করেন। বলেন, সিনিয়ররা গিয়ে জুনিয়রদের থামাইছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।