ভারত ভূখণ্ড ভেঙে দু’টুকরো হতো না, যদি জওহরলাল নেহরুর বদলে প্রধানমন্ত্রী হতেন মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। এমনটাই মনে করেন তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা।
পানজিম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গোয়ার শঙ্খলিম শহরে ‘গোয়া ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট’-এর একটি অনুষ্ঠানে বুধবার এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে দালাই বলেন, ‘‘ওই সময় মহাত্মা গান্ধী চেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলি জিন্নাহই প্রধানমন্ত্রী হোন। কিন্তু পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছিলেন খুবই আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার মানুষ। উনি চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হতে। যদি মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছা পূর্ণ হতো, তা হলে হয়তো ভারত ভূখণ্ড ভেঙে দু’টুকরো হয়ে ভারত ও পাকিস্তান, দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হতো না।’’
ওই অনুষ্ঠানে এক ছাত্র ৮৩ বছরের তিব্বতি ধর্মগুরুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘কী ভাবে ভুল এড়াতে পারি আমরা?’’
তারই জবাব দিতে গিয়ে দালাই বলেন, ‘‘পণ্ডিত নেহরুকে আমি ভালোই চিনতাম। উনি খুব অভিজ্ঞ, জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ছিলেন। তবে কোনো কোনো সময় ভুল তো হয়ই। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল।’’
গণতন্ত্রের দাবিতে সরব ছিলেন বলেই তিব্বতি ধর্মগুরুকে তিব্বত ছেড়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এ দিনও দালাই কথা বলেন গণতন্ত্রের পক্ষে। তিব্বতি ধর্মগুরু বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সামন্ততন্ত্র থেকে গণতন্ত্র অনেক ভালো। সামন্ততন্ত্রে সব সিদ্ধান্ত নেন গুটিকয়েক মানুষ। আর তা সবার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। তাই ওই ব্যবস্থা খুবই বিপজ্জনক। গণতন্ত্রে এটা হয় না। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত প্রাধান্য পায়।’’
যে রাতে তিব্বত ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ধর্মগুরু দালাই লামা, এ দিন গোয়ার অনুষ্ঠানে তারও স্মৃতিচারণ করেন অশীতিপর তিব্বতি নেতা। বলেন, ‘‘১৯৫৯ সালের ১৭ মার্চ রাতে আমরা পালাতে বাধ্য হয়েছিলাম।’’
কেন বাধ্য হয়েছিলেন, সেটাও সোজাসাপটা জানিয়েছেন দালাই লামা। বলেছেন, ‘‘চীনা প্রশাসন আর সে দেশের সেনাবাহিনীর দমনমূলক আচার-আচরণে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, কাল বেঁচে থাকব তো? তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তখন ’৫৯-এর ১৭ মার্চ রাতে ঠিক করে ফেলি, আজই পালাতে হবে।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা