নিরাপদ সড়কের দবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি’র (বিআরটিএ) বরিশাল কার্যালয়ে ভিড় বেড়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় বিআরটিএ’র দফতরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় লেগে রয়েছে। আগতদের বেশিরভাগই যানবাহনের চালক। এসেছেন লাইসেন্স করাতে এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশনসহ যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তত করাতে।
বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন জোরদার হওয়ার পরই চালক লাইসেন্স এবং গাড়ির নতুন রেজিস্ট্রেশন ও পুরাতন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর এ সংখ্যা আগের চেয়ে ১০ গুন বেড়েছে। সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে এমন চাপ সামলাতে তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী তারা আগতদের সেবা দিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় বিআরটিএ কার্যালয় মাত্র দুটি কক্ষ নিয়ে বসে। সেবা প্রত্যাশীদের অবাধ যাতায়াতের কক্ষ হলো পরিদর্শক দেবাশীষ চক্রবর্তীর কক্ষটি। ওই কক্ষটিতে অফিস সহকারীসহ অন্যরাও বসেন।
সোমবার বেলা ১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কমপক্ষে ৫০ জন সেবা প্রত্যাশী অপেক্ষা করছেন। তাদের বেশির ভাগই এসেছেন মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করানোর জন্য। অন্যরা এসেছেন মোটরসাইকেল ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
বিআরটিএ বরিশাল কার্যালয়ের পরিদর্শক দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, সকালে ভিড় ছিল আরও বেশি। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকেই বিআরটিএ অফিসে ভিড় বাড়তে শুরু করে। এরপর ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর রোববার থেকে এর চাপ আগের চেয়ে ১০ গুন বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিআরটিএ অফিসে কথা হয় সেবা প্রত্যাশী সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মোটরসাইকেল চালালেও কখনও চালক লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। রোববার বাড়ি থেকে নগরীতে আসার সময় বরিশাল-ভোলা সড়কের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভকারী একদল শিক্ষার্থী লাইসেন্স দেখতে চায়। দেখাতে না পারায় তারা নানা ভাষায় কটূক্তি করেছে। তাই তিনি বিআরটিএ অফিসে চলে এসেছেন লাইসেন্স করানোর জন্য।
বানারীপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মোটরসাইকেল চালকের লাইসেন্স করানোর নিয়ম-কানুন জানতে এসেছি। কিন্ত ভিড়ের জন্য কারও সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। তবে দেখছি দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও তাদের ঘনিষ্ট লোকজনদের মাধ্যমে কাগজপত্র দেয়া হলে কর্মকর্তারা দ্রুত গ্রহণ করছেন।
বিআরটিএ’র বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলমের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশাল বিআরটিএ’তে সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা আগের চেয়ে ১০ গুন বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশিই হচ্ছে মোটরসাইকেল চালক লাইসেন্স প্রত্যাশী।
সহকারী পরিচালক জানান, তার দফতরে ১২ জন জনবল কাঠামোর বিপরীতে আছেন মাত্র ৪ জন। তাই অতিরিক্ত চাপ সামলাতে তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারমধ্যেও চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছেন বলে দাবি করেন সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) রবিউল ইসলাম জানান, ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। রোববার নগরীতে ১৪২টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজও (সোমবার) শাতাধিক মামলা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার বিভিন্নস্থানে ট্রাফিক পুলিশের চেকপয়েন্টে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য মোটরযানের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রোববার জেলায় ১৭৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আজও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাত ৮টার পর যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বলা যাবে।