বিরোধী ঐক্য বজায় রেখে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা-বেচাসহ যাবতীয় দুর্নীতি, দেশজোড়া কৃষক-সমস্যা, কর্মসংস্থানে ব্যর্থতা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তুলবে। গণ-আন্দোলন শুরু হবে ৯ আগস্ট থেকে। অন্য বিরোধী দলগুলোও ওই দিন থেকে তাদের মতো করে আন্দোলন শুরু করবে সংসদের ভেতরে ও বাইরে।
রণনীতিতে সাফল্য এলে জোট সরকারের সম্ভাব্য নেতৃত্ব কে দেবেন, সেই প্রশ্নটি কংগ্রেস আপাতত অমীমাংসিত রাখছে। কারণ কংগ্রেস চায় না নেতৃত্বের প্রশ্নে বিরোধী ঐক্যে কোনো ফাটল ধরুক। রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক লক্ষ্য বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
আজ শনিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মোটামুটি এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। সভাপতি হওয়ার পর এটা ছিল ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক। অসুস্থতার কারণে সোনিয়া গান্ধী বৈঠকে যোগ দেননি। আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের আগে চলতি বছরের শেষাশেষি চার রাজ্যের বিধানসভার ভোট রয়েছে। বৈঠকে সেই ভোটের রণকৌশল নিয়েও আলোচনা হয়।
কংগ্রেস ঠিক করেছে, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রশ্নগুলো বড় করে তুলে ধরবে। কারণ, দুর্নীতিমুক্ত সরকার ও স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি সরকার গড়েছিল। দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসের বড় অস্ত্র রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা-বেচা। এর সঙ্গে রয়েছে ‘মোদি-ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতি। ব্যাংক জালিয়াতি করে দেশত্যাগী হওয়া হীরা ব্যবসায়ী মামা-ভাগনে মেহুল চোকসি ও নীরব মোদির বিষয়ে নতুন যে তথ্য জানা গেছে, কংগ্রেস বড় হাতিয়ার করতে চলেছে তাকেও। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মেহুল চোকসি অ্যান্টিগা ও বারমুডার নাগরিকত্ব নিয়েছেন ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। তার আগে ওই দেশ জানতে চেয়েছিল ভারতের কোনো আপত্তি রয়েছে কি না। সিবিআইসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকেও তারা চিঠি দিয়েছিল। কেউ কোনো রকম আপত্তির কথা জানায়নি! অথচ তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেহুল চোকসি, নীরব মোদি ও তাঁদের কোম্পানির বিরুদ্ধে মোট ৪২টা মামলা ছিল আদালতে।’ সুরযেওয়ালার প্রশ্ন, মোদি সরকারের সম্মতি ছাড়া কী করে তাঁরা অন্য দেশের নাগরিকত্ব পান এবং কী করেই বা দেশত্যাগী হন?
গণ-আন্দোলনে কংগ্রেস হাতিয়ার করবে কর্মসংস্থানে ‘ব্যর্থতা’ এবং বিভাজনের রাজনীতিকেও। এই প্রসঙ্গে আসামের নাগরিক পরিচয়পঞ্জির (এনআরসি) বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়। ‘বিদেশি’ প্রশ্নে আসামের মানুষের মধ্যে একটা অসন্তোষ আছে। সেই অসন্তোষকে গুরুত্ব দিতেই রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি হয়। কংগ্রেস তাই এনআরসি নিয়ে সাবধানী। আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বৈঠকে এনআরসি নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সুরযেওয়ালা বলেন, সংসদে পেশ করা বিজেপি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, কংগ্রেস আমলে ৮২ হাজার ৭২৮ জন ‘বিদেশি’কে আসাম থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তুলনায় বিজেপির চার বছরের শাসনে ‘বিদেশি’ বিতাড়িত হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮২২ জন! এনআরসি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আপত্তি, তারা বিষয়টিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ করে তুলতে চায় ভোটের স্বার্থে। কংগ্রেস এই উদ্যোগেরই বিরোধিতা করছে।