প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনিক আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে মালশিয়া সরকার বিদেশি কর্মীদের জন্য সাময়িক ওয়ার্ক পাস ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে । ফলশ্রুতিতে মালশিয়ায় আবস্থানরত আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী সেদেশেই কাজের সুযোগ পাবে। তা না হলে কর্মীদের দেশে ফিরে আসতে হতো।
জাতীয় সংসদে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) কামাল আহমেদ মজুমদারের ( ঢাকা-১৫) তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের ১৬২টি দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী বর্তমানে কর্মরত আছে। বিদেশে যেসব কর্মী আন ডকুমেন্টেড অবস্থায় আছে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের মধ্যমে বৈধকরণ, আইনী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরবে প্রায় ৮ লাখ, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৬৭ হাজার এবং ইরাকে ১০ হাজার আন ডকুমেন্টেড বাংলাদেশি শ্রমিকের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।
এ সময় তিনি জানিয়েছেন, যে কোনো আইন বহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সি ও মেডিকেল সেন্টারগুলোকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের আওতায় তাৎক্ষণিক জরিমানা ও কারদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ
নুরুল ইসলাম ওমরের (বগুড়া-৬ ) প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । দ্বিতীয় কাঁচপুর, ২য় মেঘনা এবং ২য় গোমতি সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ঢাকা-চট্রগ্রামের মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন ও পাতাল ট্রেনের সম্ভ্যবতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর অপর প্রান্তে মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এটি সরকারের এক অন্যতম সাফল্য।
দারিদ্র্য নিরসন সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৫ সালে দারিদ্র্যর হার ছিল ৪০ শতাংশ যা ২০১৫ সালে নেমে এসেছে ২৪.৮ শতাংশে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা যা চলতি অর্থবছরে ৪৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.১ শতাংশ যা গত অর্থ বছরে ৭.১১ শতাংশ হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সব্বোর্চ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এ সরকারের এক অন্যতম সাফল্য। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-৬অর্থ বছরের চেয়ে দেশের বাজেট চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ১ কোটি ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হার ছিল ১৭.৬৪ শতাংশ। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬ সালের নমিনাল জিডিপির ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মোট রাজস্ব ও কর রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। ২০০৯-১৫ মেয়াদে মোট রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল বার্ষিক ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
রেল খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ৩৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ১৮০ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন, ১০১ কিলোমিটার রেলপথ মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।