ভারতের আসামে ৪০ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কার মধ্যই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন বিজেপির এক নেতা। ভারতীয় নাগরিকত্ব না থাকায় আসামে হঠাৎ রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে এক বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক। তারা যদি স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ না করে, তাদের গুলি করা উচিত।’
ওই বিজেপি নেতার নাম টি রাজা সিং। তিনি তেলেঙ্গানা রাজ্য বিধানসভার সদস্য। এর আগেও তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকাকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলে বিতর্ক উসকে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
আসামের নাগরিকত্ব বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। এরপর সংবাদ সংস্থা এএনআইকে রাজা সিং বলেন, ‘বিদেশিদের আমাদের দেশে রাখা কীভাবে ঠিক হয়? এদের আমাদের রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’
রাজা সিং বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করছি, তাঁদের দূরে পাঠাতে। যদি সেটা না হয়, অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যা করা হয়, তাই করা হোক। রোহিঙ্গা অথবা বাংলাদেশিরা শান্তিপূর্ণভাবে যদি ভারত না ত্যাগ করে, তবে তাঁদের সবাইকে গুলি করা প্রয়োজন।’
আসামে নাগরিকত্বহীন জনগোষ্ঠীকে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) তালিকায় নাম ঢোকানোর জন্য কংগ্রেস চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলে এর কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির প্রধান অমিত শাহ। এর এক দিন পরেই বিজেপির আইনপ্রণেতা রাজা সিং তাঁদের ক্রমিক অপরাধী উল্লেখ করে আপত্তিকর এ মন্তব্য করেন। এ ছাড়া কংগ্রেস অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপদ রাখতে চাচ্ছিল বলে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ভারতীয় নাগরিক পরিচয় শনাক্ত করতে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো আসামে এনআরসি তালিকা হালনাগাদ শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আসামে বসবাসকারী ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন এনআরসি তালিকায় নিজেদের নাম তুলতে। ওই তালিকায় ঠাঁই হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের। অর্থাৎ আসামে বসবাসকারী ৪০ থেকে ৪১ লাখ মানুষ ‘ভারতীয়’ হিসেবে ওই তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। ফলে এঁদের মধ্যে নাগরিকত্ব হারানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসীদের আন্দোলন-বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর আসামে যাওয়া ব্যক্তিরা বিদেশি নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন। আসামে প্রকাশিত বিতর্কিত জাতীয় পঞ্জীকরণ তালিকায় দেখা যাচ্ছে, সেখানকার প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা অবৈধ অভিবাসী। পৃথকভাবে গত বছর বিশেষ একটি আদালত আসামের প্রায় এক হাজার অধিবাসীকে বিদেশি নাগরিক ঘোষণা করে আটককেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ রাজ্যের ৩৩টি জেলার ১৫টিতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অবৈধ বিদেশির বাস। ১৯৮৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বিশেষ আদালত ৮৫ হাজার মানুষকে বিদেশি ঘোষণা করেছে।