শেষ হলো বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা। সেই সাথে ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়ছে ভোটের দিনের। কেননা আজ বাদে আগামী কাল সিটি নির্বাচনের সেই কাংখিত ভোট গ্রহন। তাই এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওইদিন বরিশালের ভোটাররা আগামী ৫ বছরের জন্য বেছে নিবে তাদের নেতা অর্থাৎ মেয়র এবং কাউন্সিলরদের।
তাই প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনা শেষে হিসাব নিকাশ কশছে ভোটাররা। সৎ, যোগ্য, জনবান্ধব এবং আধুনিক চিন্তা ধারার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা। সেই ভাবনা থেকেই নিজেদের যোগ্য প্রার্থী দাবী করে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বিসিসি’র ৬ মেয়র ও দুই পদের মোট ১২৯ কাউন্সিলর প্রার্থী। তবে ভোটারদের চিন্তাধারা এবং পছন্দের তালিকায় কে রয়েছেন সেই ফলাফল বেরিয়ে আসবে ৩০ জুলাই ভোটের ফলাফল ঘোষনার সাথে সাথে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আজ ২৯ জুলাই রোববার দুপুর থেকে বিকালের মধ্যেই বিসিসি’র ১২৩টি কেন্দ্রে পুলিশি নিরাপত্তায় পৌছে দেয়া হবে ব্যাটল বক্স সহ নির্বাচন সরঞ্চামাদী। সেই সাথে কেন্দ্রগুলোতে আজ থেকেই দায়িত্ব পালন শুরু করবেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রিজাইডিং অফিসাররা।
তার আগে গতকাল (২৮ জুলাই) শনিবার বিকাল থেকেই নগরীতে নির্বাচনকালিন নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু করেছে র্যাব ও বিজিবি। নির্বাচনী এলাকা মনিটরিং করছেন ৫৪ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের ৩০টি করে টিম সকাল থেকেই নগরীর সদর রোড সহ নির্বাচনী এলাকায় টহল দিয়েছে। তাছাড়া সন্ধ্যার পরে মোটর সাইকেল এবং জিপ নিয়ে শোডাউন দিয়েছে র্যাব-৮ সদস্যরা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবার নতুন-পুরাত মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। হিসাব অনুযায়ী বরিশাল সিটিতে এবার নারী ভোটারের তুলনায় পুরুষ ভোটার ৭০৬ জন বেশি। ওই সংখক ভোটারদের বিপরিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন মেয়র প্রার্থী।
এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনিত “নৌকা” প্রতীকের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপি মনোনিত “ধানের শীষ” প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মজিবর রহমান সরওয়ার, জাতীয় পার্টির “লাঙ্গল” প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনিত “হাতপাখা” প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, বাসদ মনোনিত “মই” প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও কমিউনিস্ট পার্টির “কাস্তে” প্রতীকের মেয়র প্রার্থী একে আজাদ।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৫ জন। অবশ্য সংরক্ষিত ১০.১১.১২ নং ওয়ার্ডে এবং সাধারণ ১৫, ১৬ ও ১৯ নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চারজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এবার ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির কারনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে মোট ১২৩টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগনের জন্য। তার মধ্যে আবার বুত এর সংখ্যা ৭৫০টি। অবশ্য কেন্দ্রে ভোটারদের চাপ এবং প্রয়োজন হলে প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী বুথ এর সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া এবার ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা হবে। ওয়ার্ড চারটি হল, ১২, ২০, ২১ ও ২৮। সব মিলিয়ে যে ১২৩টি কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে ১১২টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ন বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা। গুরুত্বপূর্ন প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি সাধারণ ১১টি কেন্দ্রে ২২ জন করে দায়িত্ব পালন করবেন।
তাছাড়া ভোট কেন্দ্রের ভেতরে দুই হাজার ৬১৩ জন প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এদের মধ্যে থেকে ২ হাজার ৩৭৩ জন আগামীকাল ৩০ জুলাই ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন। বাকিরা আপদকালিন জরুরী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। যারা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের মধ্যে ১২৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৭৫০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ৫শ জন পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করবে।
উল্লেখ্য, সকল জল্পনা কল্পনার অবসন ঘটিয়ে আগামী কাল ৩০ জুলাই সোমবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাংখিত ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষে গতকাল ২৮ জুলাই শনিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা। সেই সাথে নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আজ সন্ধ্যার পূর্বে নগরীতে প্রবেশের প্রতিটি গেটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশী চৌকী স্থাপন করা হবে। অপরিচিত এবং বাইরের লোকজন বরিশালে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের তল্লাশী করে নগরীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
অবশ্য এর আগেই গতকাল শনিবার থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাবের ৩টি চেক পোষ্ট সহ পুলিশের একাধিক চেক পোষ্ট দেখা গেছে। নগরীর আবাসিক হোটেল গুলোতে বহিরাগত এবং অপরিচিত লোক নিয়ন্ত্রনের জন্য তল্লাশী কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ এবং ডিবি’র টিম। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে শান্তিপূর্ন ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন নজিরবিহিন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।