জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় আরাফাত সানির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক দাবি করে এক তরুণী যে কাবিননামা দেখিয়েছেন, তা ভুয়া। ওই কাবিননামায় মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) অফিসের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে গিয়ে কোনো কাজি অফিস পাওয়া যায়নি এমনটাই জানিয়েছে বিডি২৪লাইভ.কম নামের একটি পত্রিকা। ওই তরুণীর কাবিননামায় ঠিকানা লেখা ২০/সি মেরাদিয়া, খিলগাঁও, ঢাকা। কাজির নাম কাজি মো. আনোয়ার হোসেন। আজ সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাসার নিচে ভাই ভাই নামক একটি গোশতের দোকান। দোকানদারের নাম মো. আবদুল জলিল। আবদুল জলিল জানান, তিন বছর ধরে এখানে তিনি গোশত বিক্রি করছেন। এই বাসায় কোনো কাজি অফিস নেই। এর আগেও কোনো দিন এখানে কোনো কাজি অফিস ছিল না। কথা হয় ২০/সি মেরাদিয়ার বাড়ির মালিক মো. আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে এই বাড়ি পেয়েছেন। এই বাসায় গত ১০ বছরের মধ্যে কোনো কাজি ছিল না। তিনি কোনো কাজিকে অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেননি। যদি কেউ এই ঠিকানা ব্যবহার করে কাবিননামা বানিয়ে থাকেন তা ভুয়া। কারণ, তাঁর বাসায় আগে কোনো কাজি অফিস ছিল না, এখনো নেই। একই তথ্য জানান বাসার পাশের চা দোকানি মালেক। তিনি জানান, পাঁচ বছর ধরে এখানে তাঁর চায়ের দোকান। কিন্তু ওই বাসায় কোনো দিন কোনো কাজি অফিস ছিল না। এলাকায় একটি কাজি অফিস আছে, তবে সেটি ২০/১ মেরাদিয়ায়। আর ওই অফিসের কাজি সাহেব একজন হাফেজ মানুষ। তিনি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অথবা ছেলেমেয়ের বাবা-মাকে উপস্থিত না করে কোনো দিন কোনো বিয়ে দেন না। প্রায় দুই মিনিট হেঁটে ২০/১ নম্বর বাসায় গিয়ে একটি কাজি অফিস পাওয়া যায়। সেই কাজির নাম হাফেজ মাওলানা মো. ছলিম উল্লাহ খান। এলাকার একমাত্র কাজি তিনি। কাজি মো. ছলিম উল্লাহ খানের সহকারী মো. বশির উদ্দিন জানান, এই ঠিকানা ছাড়াও ৭৬ মেরাদিয়া, খিলগাঁও এলাকায় তাঁদের আরো একটি শাখা রয়েছে। ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে বিয়ের সম্পর্ক দাবি করে ওই তরুণী যে কাবিননামা দিয়েছেন, তাতে বালাম নম্বর : ৫৬, পৃষ্ঠা নম্বর : ২৩ এবং তারিখ ০৪/১২/২০১৪ উল্লেখ করা আছে। এই রকম কোনো বই তাঁদের কাছে নেই বলে জানান বশির উদ্দিন। ওই তরুণীর বিয়ের কাবিননামা দেখালে বশির উদ্দিন বলেন, ‘যে কাজির নাম ব্যবহার করা আছে, তা ভুয়া। এটি কেউ ইচ্ছা করে বানিয়েছে। এ রকম কাবিননামা ইচ্ছে করলেই অনেকে বানাতে পারেন। আমাদের যে কাজি সাহেব রয়েছেন, তিনি কোনো দিন এমন দুই নম্বর কাজ করেন না।’ মো. আনোয়ার হোসেন নামের কোনো কাজিকে চেনেন কি না জানতে চাইলে বশির উদ্দিন জানান, খিলগাঁওয়ের ৬৫ উত্তর গোড়ান এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামের একজন কাজি রয়েছেন। ৬৫ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁওয়ে গিয়ে একটি কাজি অফিস পাওয়া যায়। ওই অফিসের কাজি আনোয়ার হোসেন (বকুল) বলেন, ‘আরাফাত সানি নামের কেউ আমার কাজি অফিসে এসে বিয়ে করেননি। আর কাবিননামায় যে ভলিউম ও পৃষ্ঠা নম্বর রয়েছে, তার কোনোটিই সঠিক নয়। কারণ, আমার কাছে যে বই রয়েছে, তাতে এমন কোনো কিছু নেই। আর কাবিননামায় যে সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও আমার নয়।’ প্রমাণস্বরূপ আনোয়ার হোসেন নিজের সিল ও স্বাক্ষর করে দেখিয়ে দেন। এই কাজির অফিসের সামনে যে সাইনবোর্ড রয়েছে তাতেও ওই তরুণীর করা কাবিননামার সঙ্গে কোনো মিল নেই। কাজি আনোয়ার হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তাঁর সিল ও স্বাক্ষর জাল করে অনেক ব্যক্তি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে আসছে। এ কারণে তিনি খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এই বলে সেই জিডির কপি দেখান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এমন কাজ অনেক মানুষ করে থাকে। তবে আমার মনে হয় উকিলরা কোর্টে যে ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করে, তারাই এই রকম ভুয়া কাবিননামা তৈরি করতে পারে। এখন আমার মতে, যে ছেলের নামের এই ভুয়া কাবিননামা তৈরি করেছে, তিনি চাইলে মামলা করতে পারেন। তখন বোঝা যাবে যে আসলে কারা টাকার বিনিময়ে এই সব কাজ করে থাকেন।’ কাবিননামার ব্যাপারে ওই তরুণীর মুঠোফোনে আজ একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। গতকাল রোববার সকালে ঢাকার আমিনবাজার থেকে ওই তরুণীর করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আদালত তাঁর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সূত্র::বিডি২৪লাইভ.কম