বরিশালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলমান প্রচারণায় সর্বমহলে আলোচিত মেয়রপ্রার্থী ডা: মনীষা চক্রবর্তী। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী মেয়রপ্রার্থী হলেন। পেশায় চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালের রাজনীতিতে একজন আলোচিত মানুষ। বরিশালের নাগরিকদের বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময়ই রাজপথে ছিলেন সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকায়।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে মনোনীত হয়ে মই প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন ডা: মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বরিশালের সদস্য সচিব। বরিশাল নগরীতেই তার বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবন শুরু করেন বরিশাল নগরীর মল্লিকা কিন্ডারগার্টেনে। তিনি বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন এবং বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর ৩৪তম বিসিএসে নিয়োগ পেলেও সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে তিনি যুক্ত হন বাসদের রাজনীতিতে। রাজনীতি করলেও চিকিৎসা পেশা ছাড়েননি তিনি। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ও বস্তির সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে ‘গরিবের ডাক্তার’ খেতাব পান তিনি।
তার বাবা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তী। তিনি বরিশাল প্রেস ক্লাবের একজন সিনিয়র সদস্য। মনীষা সারা দুনিয়ার সমাজবিপ্লবীদের আইকন ‘চে গুয়েভারার’ মতো নিজের ডাক্তারি পেশাকে জড়িয়েছেন সমাজবিপ্লবের মহান কাজে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় যেখানে চলে অবাধে কালো টাকা আর পেশিশক্তির ছড়াছড়ি সেখানে শুধু জনগণের মাটির ব্যাংকের সঞ্চয় দিয়েই তিনি লড়ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দেশের বৃহত্তর দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে। যাদের নিত্যদিনের প্রচারে আসছেন সাবেক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছুটে আসছে করপোরেট মিডিয়া। তার বিপরীতে ডা: মনীষার প্রচারে লড়ছেন বরিশালের শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ, বস্তিবাসী রিকশাওয়ালা, জাহাজঘাটের কুলি। এই ব্যতিক্রমী নির্বাচনে ডা: মনীষার পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সমাজবিপ্লবের পক্ষের সৈনিকেরা।
সারা দেশে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ ফেসবুকে যেভাবে ডা: মনীষাকে সাহস জোগাচ্ছেন তাতে তিনি নিজেকে আরো অধিকতর সাহসী মনে করছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, মানুষের চিকিৎসাকে আমি ব্যবসায় হিসেবে দেখি না। চিকিৎসা সেবামূলক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি স্কুল-কলেজে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছি, বস্তিবাসীদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। আমাকে নির্বাচনের জন্য শ্রমজীবী খেটেখাওয়া মানুষেরা আমার পাশে আছে। জনগণের মাটির ব্যাংকে সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে আমার নির্বাচনের ব্যয় চালাচ্ছি। আমরা নির্বাচিত হতে পারলে নগর কাউন্সিল তৈরি করে উন্নয়ন করব। লাখো মানুষ ফেসবুকে তাকে মানসিক সমর্থন দিয়ে যাওয়াকেই তিনি তার প্রাথমিক বিজয় হিসেবে মনে করছেন।
তার এই নির্বাচনী লড়াই যে এ দেশের মানুষকে আলোড়িত করতে পেরেছে এটিই তার রাজনীতির বিজয়। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই সবচেয়ে বড় কথা দেশের বড় দুই দলের বিরুদ্ধে যে সমাজবিপ্লবীরা পাল্লা দিয়ে লড়তে পারে এটিই মুখ্য বিষয় এই তরুণীর। বরিশাল নগরীর রসুলপুর বস্তির বাসিন্দা কাজল রেখা বলেন, ডা: মনীষা আমাদের মতো গরিব মানুষের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। আমরা অনেক আগে থেকেই সুখে-দুখে তাকে কাছে পাচ্ছি। তাই এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা তার পাশে থাকব। তার মতে দেশের উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজি বন্ধ করতে ডা: মনীষা চক্রবর্তীকেই দরকার।
মনীষার রাজনৈতিক সহকর্মী ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নীলিমা জাহান বলেন, ডা: মনীষা চক্রবর্তী বরিশালের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন। ফেসবুকে দেয়া তার ভিজ্যুয়াল আহ্বান শুনলেই যে কেউ তার মধ্যে সমাজবিপ্লবের নতুন চেতনা উপলব্ধি করতে পারবেন।