প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম স্পুটনিককে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে একটি নৈরাজ্যপ্রবণ বিশ্বব্যবস্থা, যেখানে বহুপাক্ষিকতা-বাদকে দুর্বল করার একাধিক প্রচেষ্টা চলেছে, সেখানে তিনি বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বহুপক্ষীয়তাবাদে এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে সার্ক ও বিমসটেকের গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা ১৯৮৫ সালে বাস্তবে রূপ লাভ করেছিল।
১৮ই জুলাই ঢাকা ডেটলাইনে স্পুটনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন রাশিয়ার সহযোগিতায় তার প্রথম আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ উদযাপন করছে। রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট রাশিয়ার জি-থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর নির্মিত হচ্ছে। এতে তেজস্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্পুটনিক ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়, রুপুপর প্রকল্প আধুনিক অবকাঠামো নিয়ে এসেছে। এবং তা এই অঞ্চলে বহু ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। আণবিক প্লান্ট বাংলাদেশকে তার দরকারি জ্বলানি দেবে, এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহ?েযাগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে দেশটিকে সাহায্য করবে। স্পুটনিককে দেয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তার সরকারের অগ্রাধিকার হলো ইতিবাচক আঞ্চলিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিশ্বের সব দেশের প্রতি বন্ধুত্বের নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির ধারণাকে এগিয়ে নিতে চায়। তার কথায়, ‘বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় বহুপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তঃ সরকার মঞ্চগুলোকে সক্রিয় করে বাংলাদেশের অথনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বর্তমান বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র, দুর্বল বা শক্তিশালী সবধরনের রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে বহুপক্ষীয়তার মধ্য দিয়ে আমরা জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর। সে কারণে, আমরা সর্বদাই সম্ভাব্য সকল ফোরামের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতির বিকাশে আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশ তার সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ইন্টেগরেশনের একটি অভিপ্রায় আছে, আর তার কেন্দ্রে আছে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ইন্টেগরেশন। সার্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমার সরকার পুনরায় ক্ষমতালাভের পর আমার সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী তথ্য দেন যে, সার্ক প্রক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা, ব্লু-ইকোনমি এবং অভিভাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করেছি।
বিমসটেক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর আওতায় পরিচালিত ১৪টি সেক্টরের মধ্যে দুটি সেক্টর ব্যবসা-বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের খাতে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। ২০০৮ সাল থেকে বিসমসটেকে আরো আটটি সেক্টর যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাসবাদ দমন, পরিবেশ, সংস্কৃতি, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং জলবায়ু পরিবর্তন।