প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপপুর প্রকল্প নিয়ে অনেকে বিরূপ কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য উদ্বেগের কিছু নেই। এখানে বিশ্বের সর্বাধিক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটে রি-অ্যাক্টর ভবনের ভিত্তিতে প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে মূল পর্বের নির্মাণকাজের সূচনা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা ও ফলক উন্মোচন করেন। পরে এখানে আয়োজিত এক সুধীসমাবেশে কথাগুলো বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদীর রূপপুরে এসে পৌঁছান। তিনি প্রকল্পে পৌঁছালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, কয়েকজন মন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধান তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে এসে ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাত করেন।
সুধীসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রূপপুর প্রকল্প আর এগোয়নি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর রূপপুর প্রকল্পের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। তখন থেকে শুরু হয় প্রকল্পের বাস্তব কাজ। কিন্তু ২০০১ সালে তাঁর দল সরকার গঠন করতে না পারায় রূপপুর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি থেমে যায়। ২০০৮ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলে আমরা সরকার গঠনের সুযোগ পাই। তখন থেকে আবারও শুরু হয় রূপপুর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি।
শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রকল্পে রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে উঠে এখানে চাকরির সুযোগ পায়, সে জন্য রাশিয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি আলাদা ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানকার বর্জ্য কী হবে—তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। রাশিয়া এর দায়িত্ব নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করব। এ জন্য একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি গঠন করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কীভাবে দেশ এগিয়ে যাবে, সেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ইনশা আল্লাহ আমরা পারব। ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ, রসাটম ফার্স্ট ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আলেক্সান্ডার লকশিন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিচালক দোহি হ্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মো. আনোয়ার হোসেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আহমেদ, রূপপুর প্রকল্প পরিচালক সৌকত আকবরসহ বাংলাদেশ ও রাশিয়ান সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও পরমাণু শক্তি কমিশনের পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ইউরি বরিসভ বলেন, বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান সরকারের সহযোগিতা থাকবে।
আলেক্সান্ডার লকশিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণকাজে আমরা যথাসম্ভব বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও লোকবল যুক্ত করার চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।’
গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম কংক্রিট ঢালাইকাজের উদ্বোধন করেন। সাড়ে সাত মাস পর আজ দ্বিতীয় কংক্রিট ঢালাইকাজের উদ্বোধন করা হলো। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সর্ববৃহৎ রূপপুর প্রকল্প নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।