নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার বীমা দাবি পাবে। প্রতি ডলার ৮৩ টাকা হিসাবে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার এবং আহতরা কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবেন তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তাদের বয়স, আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে এ ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হবে।
বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের পুনঃবীমা কোম্পানি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১২ মার্চ ৭১ জন আরোহী নিয়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার বিএস ২১১ ফ্লাইট। এতে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হন। আহত উদ্ধার করা হয় ২০ জনকে।
এ এয়ারলাইন্স কোম্পানিটির বীমা করা রয়েছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সে। আর সেনা কল্যাণ পুনঃবীমা করেছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে। ফলে ক্ষতিপূরণের একটি অংশ দিতে হবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে।
যোগাযোগ করা হলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সিইও শাহরিয়ার আহসান বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবার এবং আহতরা ক্ষতিপূরণ হিসাবে কি পরিমাণ বীমার টাকা পাবেন তা সার্ভে রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। তবে হালের (বিমান) প্রতিবেদন আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। হালের সম্পূর্ণটাই ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং হালের বীমা দাবি হিসেবে ইউএস-বাংলা ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার ক্ষতিপূরণ পাবে।
নিহতদের বীমা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ২ লাখ ইউএস ডলার বীমা করা। তবে যাত্রীরা এ পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবেন না। নিহতের পরিবার বা আহতরা বীমা দাবি বাবদ কত টাকা পাবেন তা তাদের বয়স, আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদাসহ আর কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। তবে এটা নিশ্চিত নিহতের পরিবার ও আহতরা সমান ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
এদিকে অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলার বীমা দাবি পেতে পারেন। কারণ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের টিকিটের শর্তে উল্লেখ আছে, ওয়ারশ কনভেনশন নীতিমালা অনুসারে। আর ওয়ারশ কনভেনশনের সর্বশেষ সংশোধনী অনুসারে, একজন বিমান যাত্রীর মৃত্যু অথবা ব্যক্তিগত আঘাতের ক্ষেত্রে ১ লাখ ইউএস ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।
ইউএস-বাংলার ওয়েবসাইটে দেয়া টিকিটের টার্ম ও কন্ডিশনে উল্লেখ আছে, যাত্রীদের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ১৯২৯ সালের ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওয়ারশ কনভেনশন অথবা ১৯৫৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হেগে ওই কনভেশনটির যে সংশোধন আনা হয়- এর যে কোনটি কার্যকর হবে। অর্থাৎ ওয়ারশ কনভেনশনের সংশোধনী অনুসারে বিমান যাত্রীদের সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যে শর্ত রাখা হয়েছে তা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে ইউএস-বাংলার জিএম (পিআর) কামরুল ইসলাম বলেন, কোন নিয়মে বীমা দাবি নির্ধারণ হবে, তা আমরা নিশ্চিত না। বীমা দাবি বাবদ ক্ষতিপূরণ বীমা কোম্পানিই নির্ধারণ করবে। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের বা নিহত, আহতদের কোনো ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত তথ্য আমাদের কাছে নেই।
একাধিক সাধারণ বীমা কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, যেহেতু ইউএস-বাংলার টিকিটের শর্তে ওয়ারশ কনভেনশন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে, সেহেতু ক্ষতিগ্রস্তরা ওয়ারশ কনভেনশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। ব্যক্তির আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা, বয়সসহ বেশকিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হবে। তবে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট হতে না পারলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আদালতই ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিবেন।
এর আগে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামিম বলেছিলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সার্ভেয়ার কাজ করছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের দুর্ঘটনা কবলিত বিএস ২১১ ফ্লাইটের যে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ নেয়া হয়েছে, তার মোট লায়াবিলিটি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে প্লেনের জন্য কাভারেজ ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সার্ভে রিপোর্ট পাওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। যত দ্রুত সম্ভব সে অনুসারে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। আশা করছি, এক মাসের মধ্যেই দাবি পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবো।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাঈম হাসান বলেন, নিহত বা অাহতরা কি পরিমাণ বীমা দাবির টাকা পাবেন তা বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। বিমান কোম্পানি কি পরিমাণ অঙ্কের বীমা করেছে, এক্ষেত্রে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বীমা কোম্পানি যতক্ষণ নির্ধারণ না করছে, কেউ এটির সঠিক তথ্য দিতে পারবে না।