প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় শিখতে কিংবা স্কিল ডেভেলপের জন্য আর ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হবে না। ঘরে বসে অনলাইনেই যে কেউ স্কিল ডেভেলপ করতে পারবেন একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে রেপটো অনলাইন এডুকেশন।
তরুণ প্রজন্মকে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষণসহ, কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে শত কোর্স নিয়ে দেশের অন্যতম ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম রেপটো- এডুকেশন সেন্টারের যাত্রাকাল আজ প্রায় দুই বছর। এই ২ বছরে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে রেপটোতে। ফ্রিল্যান্সিং, মার্কেটিংসহ অন্যান্য কারিগরি কোর্স করে শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের অভিজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলছে, তেমনি সাবলম্বী হয়ে দেশের বেকারত্বের হার কমিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
রেপটোর ওয়েবসাইটে ঢুকে পছন্দের বিষয় নির্বাচন করে নির্ধারিত ফি দিয়ে যে কেউ অনলাইনে কোর্স করতে পারবেন। তবে ঢাকার বাইরের ব্যবহারকারীদের জন্য রেপটো একটু ভিন্ন রকম ব্যবস্থা নিয়েছে।
রেপটোর পার্টনার ও মিডিয়া কমিউনিকেশন অফিসার আহসান মাহমুদ বলেন, ‘ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করার ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া ডিভিডি দিয়েও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করি আমরা।’
রেপটোর শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাবে রেপটোর প্রতিষ্ঠাতা ইশতিয়াক সিয়াম বলেন, ‘শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালে। আমি যখন কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত, তখন দেখলাম, আমাদেরকে স্কিল ভিত্তিক যেসব টাস্ক শেখানো হচ্ছিল তা ১০ বছর পেছনের। অথচ আমাদের শেখানো উচিৎ ১০ বছর পরবর্তী স্কিল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা। তখন ওসব বিষয় থেকেই আমার এমন উদ্ভাবনী চিন্তা শুরু। সে সময় বাংলাদেশের মানুষের অনলাইন ভিত্তিক সেবা, ই-ট্রেইনিং, ই-লার্নিং সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না, যেখানে বাইরের দেশগুলো ই- সার্ভিসগুলোতে অনেক বেশি আপগ্রেডেড। এসব কিছু মিলিয়ে এক অভিনব চিন্তার ফলাফল হিসেবে আজকের এই অনলাইন প্রতিষ্ঠান।
মাত্র ৩টা কোর্স দিয়ে শুরু হলেও, এখন রেপটোতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি কোর্স। যার মধ্যে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে রয়েছে অ্যামাজন FBA, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, পাবলিক স্পিকিং, স্পোকেন ইংলিশ, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ অন্যান্য কোর্স। এছাড়াও স্কিল ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং এর বেশকিছু বেসিক কোর্স রয়েছে, যা একজন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে করতে পারবে।
রেপটো থেকে কোর্স করে পরীক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অনলাইনে আয়ের মাধ্যমে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন অনেকেই, তাদেরই একজন রিজভি রহমান।
তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরি না পেয়ে একটু বিচলিত হয়ে পড়ি। আমার বন্ধুর মাধ্যমে রেপটোর কথা জানতে পারি। এরপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ফ্রিল্যান্সিং করব। রেপটো থেকে আমি বেশ কয়েকটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স করে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করছি।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ, আগ্রহী যেকোনো বয়সের মানুষ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারছেন। পাশাপাশি রেপটোতে ই-টিচার হিসেবে অভিজ্ঞ যেকেউ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বা কারিগরি বিষয়ক অনলাইন কোর্স তৈরি করে, ঘরে বসেই আয় করতে পারছেন। ঠিক এভাবেই বেকার সমস্যার সমাধান দিয়ে যাচ্ছে এই অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি। ই-লার্নিং বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন আশা জুগিয়েছে, যদিও উন্নত দেশগুলো এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক এগিয়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন স্কিলভিত্তিক শিক্ষা। তাই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে কর্মনির্ভর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছড়িয়ে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে রেপটো এডুকেশন সেন্টার।
রেপটোর ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে ইশতিয়াক সিয়াম আরো বলেন, ‘বর্তমান অনলাইন এডুকেশন সেক্টরগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তুরস্ক, ইউএসএ, ভারতসহ অন্যান্য দেশ। বাংলাদেশকেও এই তালিকায় দেখতে চাই। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন আধুনিক কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে জনশক্তি গড়ে তোলাই রেপটোর মূল উদ্দেশ্য।
রেপটোর প্রাপ্তির তালিকায় বাংলাদেশ স্টার্টআপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, সুইস অ্যাম্বাসি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, ব্র্যাক ম্যারাথন ডিজিটাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৬সহ মোট ছয়টি অ্যাওয়ার্ড যোগ হয়েছে।