নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলার বিমানে রাজশাহীর তিন দম্পতি ছিলেন। এ ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই নিহত হয়েছেন। বেঁচে আছেন শুধু রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষিকা ইমরানা কবির হাসি। তিনি কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে হতাহত বাংলাদেশিদের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তালিকায় ৩২ বাংলাদেশির মধ্যে ইমরানা কবির হাসির নাম রয়েছে ১৪ নম্বরে। সবুজ রঙে নাম লিখে জানানো হয়েছে তিনি জীবিত আছেন। তবে হাসির স্বামী রকিবুল হাসানের নাম লেখা রয়েছে কালো রঙে। জানানো হয়েছে তিনি বেঁচে নেই।
প্রকৌশলী রকিবুলের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে। আর হাসির বাড়ি টাঙ্গাইলে। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে পাশ করে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হাসি। তার স্বামী একই বিভাগের জিরোসিক্স সিরিজের শিক্ষার্থী ছিলেন। রকিবুল ঢাকায় একটি বেসরকারি সফটওয়ার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। হাসি রাজশাহীর মুন্নাফের মোড় এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
এ দুর্ঘটনায় রাজশাহীর আরো দুই দম্পতি নিহত হয়েছেন। এরা হলেন- বর্তমানে রাজশাহীর শিরোইলের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম, তার স্ত্রী সাবেক শিক্ষিকা নাহার বিলকিস বানু। হাসান ইমামের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নামোশংকরবাটি এলাকায়। নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ির এলাকায়।
অন্যদিকে, উপ-শহর ১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা ব্যাংকার নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবেক শিক্ষিকা আক্তারা বেগম। নিহত নাহার বিলকিস বানু রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মালেকের বোন।তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক ছিলেন।তাদের মৃত্যুর খবরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামোশংকরবাটি ও গোমস্তাপুরের বাঙ্গাবাড়ি গ্রামে চলছে শোকের মাতম।স্বজনদের আহাজারি আর আর্ত্বনাদে এলাকাবাসির মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নজরুল ইসলাম ও আক্তারা বেগমের মেয়ে কাকন জানান, তারা দুই বোন। ঢাকায় থাকেন। তাদের বাবা-মা রাজশাহীতে থাকতেন। নেপালের বিমানবন্দরে যে বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তাতে তার বাবা-মা ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা তাদের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছেন। কিন্তু এখনো তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। ভাবছেন, ঘরে ফিরবেন তাদের বাবা-মা।
জানা যায়, ব্যাংকার নজরুল ইসলাম ও সাবেক যুগ্মসচিব হাসান ইমাম দুই বন্ধুছিলেন। নজরুল ইসলামের স্ত্রী মহিলা কলেজের শিক্ষিকা আক্তারা বেগম ও হাসান ইমামের স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষিকা বিলকিস আরা। তারা চারজনই রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা একসঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিলেন নেপালে।
নিহত বিলকিস আরার ভাই রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক জানান, ‘আমাদের নয় ভাই-বোনদের মধ্যে ৫ম বিলকিস আরা। তাদের দুই ছেলেই ক্যানাডায় থাকে। তার বোন উড়োজাহাজে চড়তে ভয় পেতেন। এ কারণে তিনি কখোনই কানাডায় যাননি। অথচ তার দুই ছেলে মাকে একাধিকবার ক্যানাডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। এবারই প্রথম তিনি উড়োজাহাজে চড়ে নেপাল বেড়াতে যাচ্ছিলেন বলে জানান আলমগীর মালেক।
আক্তারা বেগমের ভাগ্নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, তার খালা আক্তারা বেগমের দুই মেয়ে কাকন ও কনক। তারা দুইজনেই ঢাকায় থাকেন। এদের মধ্যে কাকনের বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। তার কনক লেখাপাড়া করছে। রাজশাহীর বাড়িতে তারা দুইজনেই থাকতেন।
(Visited ৮ times, ১ visits today)