রাখাইনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য বার্লিন শান্তি সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নিবন্ধন বাতিল করল জার্মানি। মঙ্গলবার মিয়ানমার টাইমসকে দেয়া এক বিবৃতিতে আট সদস্যবিশিষ্ট দলের মুখপাত্র ইউ অং টুন থেত খবরটি নিশ্চিত করেন। মিয়ানমারের কৌশলগত এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন সদস্য তিনি।
ইউ অং টুন থেত জানান, তাদের জার্মানিতে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও এই সম্মেলনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শুক্রবার তাদের এই নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। হঠাৎ করে নিবন্ধন বাতিলে বোঝা যায় তারা আমাদের কথা শুনতে সম্পূর্ণরূপে অপ্রস্তুত। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারলে নতুন অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসত।
আয়োজকদের একজন বার্লিন অ্যালাইস স্যালোমন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিজ্ঞানের অধ্যাপক মারিয়া ভো মার কাস্ত্র ভেরেলা ও সমাজকর্মী জানান, তারা রাখাইনের বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে জার্মানির বেসামরিক নাগরিক ও একই সঙ্গে ইউরোপের সচেতন নাগরিকদের অবহিত করেন। নাগরিকরা এই বিষয়টিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতার কাছে তাদের মতামত পৌঁছে দেয়। মিয়ানমারকে যেন এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়া হয় সে দাবিও জানান।
সম্প্রতি ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে রোহিঙ্গা নিধনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির ওপর ইইউ’র অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও জোরদার করা হচ্ছে। এক বিবৃতিতে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গুরুতর ও পরিকল্পিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইতোপূর্বে মিয়ানমারের মেজর জেনারেল মং মং সোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মেজর জেনারেল সো গত আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালানো সময় রাখাইন অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রধান জেন ল্যাম্বার্ড বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা খুব অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে রয়েছে। দীর্ঘ দিন এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। তাদের মধ্যে ধর্মীয় চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া তারা মানবপাচারেরও শিকার হতে পারে। এ জন্য তাদের মৌলিক শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি যাতে নিবদ্ধ থাকে, সেজন্য আমরা কাজ করে যাব। কেননা মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না- এমন মানুষদের আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া ফিরিয়ে নিতে চাইবে না তারা।