ফিলিপাইনকে চীনের প্রদেশ বানানোর আহবান জানিয়েছেন খোদ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে। ফিলিপিনো-চীনা ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে তিনি চীনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা চাইলে, আমাদেরকে আপনাদের প্রদেশ বানিয়ে ফেলুন, ফুজিয়ানের মতো।’ অনেকটা কৌতুকের ছলে কথাটা বললেও, এ নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ বোধ করছেন। ফিলিপাইনের বিতর্কিত এই প্রেসিডেন্ট যে সভায় এ মন্তব্য করেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাও জিয়ানহুয়া। উপস্থিত চীনা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা দুতের্তের ওই মন্তব্যের প্রশংসাও করেন। এ সংবাদ দিয়েছে এশিয়া টাইমস। এতে বলা হয়, শুধু এ মন্তব্যই করেন নি দুতের্তে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিমভাবে নির্মিত দ্বীপে সামরিক তৎপরতা নিয়ে আশেপাশের অনেক দেশে উদ্বেগ বাড়ছে। ফিলিপাইন নিজেও একসময় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও, দুতের্তে এখন বলছেন, চীনের সামরিক তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। অথচ, দক্ষিণ চীন সাগরের একটা অংশের মালিকানা দাবি করে ফিলিপাইনও। দুতের্তে বলেন, ‘সামরিক ঘাঁটির উপস্থিতির কথা আমার স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু এটা কি আমাদের উদ্দেশ্যে তাক করা? আপনি নিশ্চয়ই মজা করছেন। এটি আমাদেরকে লক্ষ্য করে নির্মাণ করা হয় নি। চীনকে যারা ধ্বংস করতে চায় বলে চীন মনে করে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই এ ঘাঁটি প্রস্তুত করা হয়েছে। আর সেটা হলো আমেরিকা।’
ফিলিপাইন ঐতিহ্যগতভাবে আমেরিকাপন্থি হলেও, দুতের্তে ক্ষমতায় আসার পর চীন-ঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে দেশটি। সর্বশেষ ওই মন্তব্য এরই প্রতিফলন। প্রেসিডেন্ট দুতের্তের ওই মন্তব্য অবধারিতভাবেই ফিলিপাইনে ঝড় তুলেছে। সরকারের সমালোচকরা বলছেন, তার ওই মন্তব্য প্রমাণ করে, দুতের্তের অধীনে ফিলিপাইন এখন চীনের তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সম্প্রতি পূর্ব ফিলিপাইন সাগরের বেনহাম রাইসের বিভিন্ন অংশ আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায় নিজের নামে নিবন্ধন করেছে চীন। এ নিয়ে ফিলিপাইনে জনঅসন্তোষ রয়েছে। বেনহাম রাইস মূলত ফিলিপাইনের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড)-এর অধীনে পড়েছে। কিন্তু ফিলিপাইনে এখন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, সমুদ্রতলদেশের উপাদান নিজের নামে চীন নিবন্ধন করার মানে হলো, প্রাকৃতিক সম্পদ-সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের ওপরও চীন একসময় মালিকানা দাবি করবে। দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ থাকলেও, ফিলিপাইন সাগর ও বেনহাম রাইস (যাকে সম্প্রতি ফিলিপাইন রাইস নামে নামকরণ করা হয়েছে)-এর ওপর ফিলিপাইন ব্যতীত অন্য কোনো দেশ মালিকানা দাবি করে না। কিন্তু ফিলিপিনোদের আশঙ্কা, চীন তার মালিকানা দাবির প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে।
ফিলিপাইনে উদ্বেগ রয়েছে চীনের সামরিকায়ন নিয়েও। সর্বশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবিতে দেখা গেছে, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত ও বিরোধপূর্ণ এলাকায় চীন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে।