বানারীপাড়ায় স্বামীকে ফিরে পেতে চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম সফিউর রহমান’র স্ত্রী অটিস্টিক মেয়ে নিয়ে গত ১৬ দিন ধরে কলেজে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সহ এলাকাবাসীর মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে তোলপাড় চলছে।বিষয়টি পুরো এলাকায় মুখরোচক খবরে পরিণত হয়েছে।চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম সফিউর রহমান’র স্ত্রী ঢাকার তেজগাঁও থানার ভাটারা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিসেস নাজমা সুলতানা জানান গত ৩৩ বছর পূর্বে ১৯৮৪ সালের ১ মে প্রথমে সম্পর্ক ও পরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।ঢাকার পূর্ব বাড্ডায় তারা নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন।
তাদের দাম্পত্য জীবনে ৩১ বছর বয়সী একটি মানসিক প্রতিবন্ধী অটিষ্টিক মেয়ে ও ৫ম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলে রয়েছে। ঢাকায় সরকারী জগন্নাথ ও মানিকগঞ্জ কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যখন তার স্বামী কর্মরত ছিলেন তখন ঢাকার বাসা খেকে কলেজে যাতাযাত করতেন। ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে এস এম সফিউর রহমান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় সরকারী শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজে যোগদান করার পরে সেখানে এক ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে ধীরে ধীরে তার মধ্যে পরির্বতন দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে পরিবারের দায়িত্ব কর্তব্যের প্রতি তিনি উদাসিন হয়ে পড়েন।
নাজমা সুলতানা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী সেখানে এক ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এবং তাকে নিয়ে বসবাস করছেন। বিষয়টি জেনে নাজমা সুলতানা ছুঁটি নিয়ে কোটালীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন।ওই সময় তিনি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে এ ব্যপারে লিখিত অভিযোগ করে তার স্বামীকে ঢাকার নিকটবর্তী কোন কলেজে বদলীর দাবী জানালে জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে শিক্ষা সচিবের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৫ সালের ২ জুলাই পত্র লেখেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সিরাজগঞ্জের রাশিদাজ্জোহা সরকারী মহিলা কলেজে বদলী করা হলে তিনি দীর্ঘদিনে সেখানে যোগদান না করায় ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আদেশ জারী করা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি সেই কলেজে যোগদান করেন।
সেখানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে আপত্তি জানানোর পরেও নাজমা সুলতানা অফিস থেকে ছুঁটি নিয়ে সিরাজগঞ্জে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।২০১৬ সালেল ২১ জুলাই এস এম সফিউর রহমান বরিশাল সরকারী বিএম কলেজে বদলী হয়ে চলে আসার পর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভরণপোষন সহ সর্ব প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।এ ব্যপারে নাজমা সুলতানা ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করলে তা বিচারাধীন রয়েছে।বিএম কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতী নিয়ে তিনি চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজে যোগদান করেন।গত ৩ ফেব্রুয়ারী স্বামীর খোঁেজ নাজমা সুলতানা তার মানসিক প্রতিবন্ধী অটিষ্টিক মেয়ে সুমাইয়া সুলতানাকে নিয়ে চাখার কলেজে এলে অধ্যক্ষ এস এম সফিউর রহমান টের পেয়ে গা-ঢাকা দেন।
গত ১৬ দিন ধরে স্বামীর আগমনী পথের দিকে চাতক পাখীর মতো চেয়ে থেকে কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনের একটি কক্ষে নাজমা সুলতানা মেয়ে নিয়ে মানবেতর ভাবে অবস্থান করছেন।তিনি তার স্বামীকে নিয়ে হারানো সুখের সংসার ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহায়তা কমানা করেছেন।এদিকে চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ এস এম সফিউর রহমান তার বিরুদ্ধে স্ত্রীর আনীত নারী বেলেঙ্কারী সহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন তিনি স্ত্রী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের শিকার।সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে হত্যা প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছে। কলেজের কাজে ঢাকায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন মানবাধিকার কমিশনে বিষয়টি বিচারাধীন থাকার পরেও তার স্ত্রী তার সম্মান হানী করতে ও পেনশনের অর্থ পাওয়ার লোভে সুপরিকল্পিত ভাবে চাখার কলেজে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পাঠালেও স্ত্রী তা রিসিভ না করলেও ঢাকার বাসা ভাড়ার ৮০ হাজার টাকা ঠিকই ভোগ করছেন বলেও জানান।এ প্রসেঙ্গ নাজমা সুলতানা বলেন তার স্বামী শাক দিয়ে মাছ ডাকার মতো প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।এদিকে চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম সফিউর রহমান না থাকায় এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস মায়ের মৃত্যুতে ছুঁটিতে থাকায় সহযোগী অধ্যাপক (গণিত) নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালণ করছেন।