কথায় বলে, ‘সব ভাল তার শেষ ভাল যার’- যে কোন আসর কিংবা মিশনে হাজারো ব্যর্থতার পর মানুষ একটা সান্তনা খুঁজে বেড়ায়। আগামীকাল সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সে রকম এক সান্তনার জয়ের খোঁজে মাহমুদউল্লাহর দল। উল্কার বেগে শুরু করেও তিনজাতি আসরে শেষ হাসা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে শেষ অবধি ড্র করলেও ঢাকায় শেষ টেস্টে করুণ পরাজয় সঙ্গী হয়েছে। দুই ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতেও জয় ধরা দেয়নি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের সবচেয়ে বড় স্কোর ( ১৯৩) গড়েও পরাজয় এড়ানো সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা না পাবার ঘা না শুকাতেই টেস্টেও সিরিজ পরাজয়ের বেদনায় নীল বাংলাদেশ।
এখন আর কোন ফরম্যোটের সিরিজেই বিজয়ের হাসি হাসার সুযোগ নেই। আছে কেবল টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করার সুযোগ। কাল পূণ্যভুমি সিলেটে সেই সিরিজ পরাজয় এড়ানোর ম্যাচ টাইগারদের। রোববার জিততে পারলে তিনজাতি আসর ও টেস্ট সিরিজ হারের ব্যর্থতার দায়মুক্তি ঘটবে- তা নয়। তবে ওই যে কথায় বলে, সব ভাল তার শেষ ভাল যার। শেষ পর্যন্ত একটি জয় ধরা দিলে তবু সান্তনার পরশ এসে লাগবে মনে।
সবচেয়ে বড় কথা, দুই সপ্তাহ পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসবে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি আসর। তার আগে শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের হারাতে পারা অবশ্যই শুধু ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা নয়। আগামীতে ভাল করার রসদও।
কালকের ম্যাচে মাহমদুল্লাহর দল মূলতঃ সে রসদ সংগ্রহেই মুখিয়ে রয়েছে। তারা জানে, রোববার সিলেটে জিততে পারার অর্থ কলম্বো যাবার আগে আবার চাঙ্গা হওয়া। মনে সাহস ও উদ্যম জাগা।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর মুখে ঠিক সে কথা- ‘এখন আমাদের মূল লক্ষ্য একটাই- সামনে শ্রীলঙ্কার মাটিতে যে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আছে, সেখানে যেন ভাল কিছু নিয়ে যেতে পারি।’
হারের বৃত্তে আটকে যে দল হতাশায় মুষড়ে পড়েছে, তা নয়। তবে খানিক মনমরা অবশ্যই। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ চান কালকের ম্যাচ জিতে আবার উদ্যম ফিরে পেতে। তার বিশ্বাস, বোলাররা সেরাটা উপহার দিতে পারলে হয়ত কাল জয় ধরাও দিতে পারে। এ মুহুর্তে ড্রেসিং রুমের অবস্থা কি? দল শেষ খেলায় জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
টাইগার অধিনায়ক মানছেন, তিন জাতি আসর আর টেস্ট সিরিজ কেটেছে হতাশায়। আশা ভঙ্গের বেদনায়। এখন তাই তারা শেষ ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছেন, ভাল কিছুর আশায়। তাই তো মাহমুদউল্লাহর মুখে এমন কথা, ‘টেস্ট সিরিজ ও ওয়ানডে সিরিজে আমরা আশাবাদী ছিলাম। আশানুরূপ ফল পাইনি। আর প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ভালো পারফর্ম করেছে; কিন্তু বোলাররা হয়তো সামর্থ্যের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে পারেনি; কিন্তু এখনো একটা ম্যাচ আছে, আমরা সেটার জন্য খেলব। ওটাই আমরা চিন্তা করছি। অনুপ্রাণিত হওয়ার চেষ্টা করছি, যেন আমরা সিরিজটা জিততে না পারি। অন্তত ড্র করতে পারি। এটাই লক্ষ্য। যেহেতু প্রত্যেকটা ম্যাচই আমরা খেলেছি জেতার জন্য। চেষ্টা থাকবে এটাই, যেন আমরা ভালো একটা রেজাল্ট করতে পারি।’
মোটকথা, টাইগার অধিনায়ক তাকিয়ে আছেন বোলারদের দিকে। তার বিশ্বাস ও আস্থা শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচের মত কালও ব্যাটসম্যানরা ভাল খেলবেন। রান করবেন। বোলাররা বল হাতে জ্বলে উঠলে সাফল্য ধরা দেবে। আশার কথা, কাল তামিম ফিরবেন। তামিমের অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাটিং অবশ্যই সমৃদ্ধ হবে। অন্য ব্যাটসম্যানরাও ভাল খেলার একটা অনুপ্রেরণা পাবেন।
কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যান, বিশেষ করে সৌম্য সরকারের ভাল খেলা নির্ভর করবে উইকেটের ওপর। শেরে বাংলায় প্রথম টি-টোয়েন্টির পিচটি ছিল ব্যাটিং বান্ধব। বল চমৎকার গতিতে ব্যাটে এসেছে। বাউন্সও ছিল সমান। ওঠা-নামা করেনি। তেমন কোন ম্যুভমেন্টও ছিল না। কাজেই ব্যাটসম্যানরা ইচ্ছেমত হাত খুলে খেলতে পেরেছেন।
এমন ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট মানেই তামিম ও সৌম্যর জ্বলে ওঠার অনুকুল পরিবেশ। দুজনই ফ্রি-স্ট্রোক খেলতে ভালবাসেন। খেলতে পারেনও। উইকেট যত ভাল হবে, বল যত সুন্দর গতি ও সমান বাউন্সে কম ম্যুভমেন্টে ব্যাটে আসবে এই দুই বাঁ-হাতির ভাল খেলার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। এই দুই ওপেনার একটা ভাল স্টার্ট দিলে এর পরে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ (মিঠুন হয়ত কাল খেলবেন) ও আরিফুলরা সেই সাজানো পথে হাঁটতে পারলে আগে আর পরে যখনই হোক স্কোর বোর্ড সচল থাকবে।
কিন্তু ঘুরে-ফিরে আসল কাজটা বোলারদের। শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচে পেসাররা মোটেই সুবিধা করতে পারেননি। ব্যাটিং সহায় উইকেটে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখার অস্ত্র একটাই যাবে- সঠিক জায়গায় বল ফেলা। অফ স্ট্যাম্প ও লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে জায়গা দেবার কোনই সুযোগ নেই। হাফ-ভলি ওভার পিচ আর শর্ট বল করলে আর রক্ষা নেই।
‘ডেড ওভারে’ প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা যাতে বিগ হিট কম নিতে পারে, তাই যতটা সম্ভব ব্ল্যাক হোল বা ইয়র্কার লেন্থে বল করা ছাড়াও বিকল্প পথ নেই। সেই কাজটি প্রথম ম্যাচে পেসাররা করতে পারেননি। তাই রুবেল, মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিন তিন পেসারই বেদম মার খেয়েছেন। স্পিনাররা পেসারদের ব্যাকআপ করতে পারলে একটা কথা ছিল; কিন্তু বাঁ-হাতি নাজমুল অপু ছাড়া আফিফ আর মাহমুদউল্লাহ সেই ব্যাকআপ করতে পারেননি। উল্টো প্রচুর আলগা ডেলিভারি দিয়ে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ফ্রি খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই ১৯৩ রানের বড় স্কোর গড়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সেটাকেও কম মনে হয়েছে।
তাইতো প্রথম ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আক্ষেপের সুরেই বলেছিলেন, ‘আমাদের বোলিং ব্যাকআপ ভাল হয়নি। বোলিং নিয়ে কাজ করতে হবে।’ কাজেই, শেষ কথা হলো ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে যেমন রান দরকার, বোলিং ব্যাকআপটাও হওয়া চাই তেমনি। শুধু ব্যাটসম্যানরা রান করলেই যে হয় না, তা শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচেই জানা হয়েছে। আগে কিংবা পরে যখনই হোক না কেন, বোলারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো লঙ্কানদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখা। পেসার ও স্পিনারদের যথাযথ সমন্বয়টাও খুব জরুরি। মোট কথা, জয়ের পথ খুঁজে পেতে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগ এক সঙ্গে জ্বলে ওঠা ছাড়া পথ নেই। কাল কি সেই টিম পারফরমেন্সের দেখা মিলবে?