বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সিনিয়র নেতারা একসঙ্গে বসলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
বৈঠকে চেয়ারপারসনের কারামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই বৈঠক হয়।
রাত ৮টার দিকে বৈঠকস্থল থেকে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে পুরাতন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের একাকী একটি ‘সলিটরি কনফারমেন্টে’ রাখা হয়েছে।
অবিলম্বে তাকে ডিভিশন প্রদানের দাবি জানিয়ে তিনি সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, অন্যথায় তার কিছু হলে এর দায়ভার সরকারকে বহন করতে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বৈঠকে বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য রাখেন। বেশির ভাগ বক্তাদের কাছে থেকে যে বিষয়টা আসে তা হলো দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এই সভায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন দলকে অনুপ্রাণিত করবে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার কারাগারে যাবার পর দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিবদের এটি প্রথম বৈঠক। এতে দলীয় প্রধানদের মুক্তিতে ‘আইনগত পদক্ষেপ’ এবং ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’ এর কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতির আসনটি খালি রাখা হয়। সভাপতির আসনে এক পাশে বসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অপর পাশে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মির্জা ফখরুল জানান, বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৈঠকে মোবাইলে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য শুনানো হয়। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
বৈঠকে দলের মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর নাসির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আনহ আখতার হোসেইন, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুল ইসলাম, এস এ কাইয়ুম, সুজাউদ্দিন, আবদুল রশিদ, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, এনামুল হক চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, শাহজাহান মিঞা, বিজন কান্তি সরকার, তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, আমিনুল হক, মামুন আহমেদ, আবদুল হালিম ডোনার, আবদুল হাই শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হারুনুর রশীদ এবং বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ফখরুল বলেন, শনিবার ৫ জন সিনিয়র আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আপনারা শুনে বিস্মিত হবেন, তাকে সম্পূর্ণ সলিটারি কনফারমেন্টে রাখা হয়েছে। এভানডেন্ট যে কেন্দ্রীয় কারাগার ছিলো যেটাতে এখন কেউ বাস করে না, যার ঘর-বাড়িগুলো পড়ে যাচ্ছে, স্যাঁত স্যাতে হয়ে গেছে। সেই কারাগারে তাকে সম্পূর্ণ একা একজন প্রিজনার হিসেবে রাখা হয়েছে। শুনলে আপনারা বিস্মিত হবে, ব্যথিত হবে সারা জাতি যে, তাকে (খালেদা জিয়া) কোনো ডিভিশন এখন পর্যন্ত দেয়া হয় নাই। আমরা অবিলম্বে তাকে ডিভিশন দিয়ে তার প্রাপ্য যে মর্যাদা ও সব সুযোগ সুবিধা দেবার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জেল কোডের মধ্যে খুব পরিস্কার করে বলা আছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক বিরোধী দলের নেত্রী তারা সঙ্গে সঙ্গে ডিভিশন পাবেন। এটা জন্য কোনো অনুমতির দরকার নেই, আদালতের দরকার নেই। জেল কোডে বলা আছে তিনি ডিভিশন পাবেন। অথচ খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। অবিলম্বে ডিভিশন দিন। অন্যায় সরকারকে দায়ী থাকতে হবে জেল কোডকে ভঙ্গ করার জন্য।
তিনি অভিযোগ করেন, তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা তারা ওই ভাবে এখন পর্য়ন্ত করেনি। একজন ৭৩ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ তার যে সার্বক্ষণিক পরিচারিকা যেটা জেল কোডের মধ্যে রয়েছে। সেই পরিচারিকাকেও তার সঙ্গে থাকতে দেয়া হয়নি। এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণ অমানবিক।
ফখরুল জানান, সভায় খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা সাজা প্রদানের নিন্দা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবির সিদ্ধান্ত হয়। জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজার দেয়ার জন্য দেশবাসী ধিক্কার দিয়েছে, তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে নিপীড়ন-নির্যাতন উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনজীবীদের মাধ্যমে দেশনেত্রী কোনো বক্তব্য বা বার্তা দেননি। আইনজীবীরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে সেখানে গিয়েছেন।