চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে ৩ উইকেটেই ৫০০ অতিক্রম করেছে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫১৩ রানের বড় সংগ্রহের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কাও দেখাচ্ছে দারুণ নৈপুণ্য। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ থেকে ৯ রান দূরে রয়েছে তারা।
শূন্য রানে এক উইকেট হারালেও সেই প্রাথমিক ধাক্কাটা ভালোভাবে সামলে নিয়েছে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় উইকেটে ৩০৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের বোলারদের ভালোই ভুগিয়েছেন কুশল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। দুজনেই পূর্ণ করেছেন শতক। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ডি সিলভাকে (১৭৩) আউট করে লঙ্কান প্রতিরোধ ভেঙেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দ্বিশতকের খুব কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয়েছে মেন্ডিসকে। ১৯৬ রান করে আউট হয়েছেন এই ডানহাতি ওপেনার। চতুর্থ উইকেটে আবার ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন দিনেশ চান্দিমাল ও রোশেন সিলভা।
দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ১৩৮ ওভারে ৩ উইকেটের বিনিময়ে ৫০৪ রান।
চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল ১৭৬ রানে থামেন। এ ছাড়া অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
মুমিনুল হকের ১৭৫, সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ৯২ ও তামিম ইকবালের ৫২ রানের সুবাদে ৪ উইকেটে ৩৭৪ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম দিনই নিজের উপর স্পটলাইট রেখেছিলেন মোমিনুল। দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে তিনিই ছিলেন দিনের সেরা। তবে দ্বিতীয় দিনও তার ওপর দৃষ্টি ছিলো ক্রিকেটপ্রেমিদের। কারণ, বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল-সেঞ্চুরি পাবার প্রবল সম্ভাবনা ছিল মুমিনুলের। প্রথম দিনে তার ব্যাটিং নেপুণ্যে আশার সৃষ্টি হয়।
কিন্তু দ্বিতীয় দিনের ১৬তম বলেই মুমিনুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি স্পিনার অভিজ্ঞ রঙ্গনা হেরাথের বলে আউট হন মুমিনুল। ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১৪ বলে ১৭৬ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে এটি ষষ্ঠ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। পঞ্চমটি মুমিনুলের। ২০১৩ সালে এই ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮১ রান করেছিলেন তিনি। এটিই এ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
মুমিনুলের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। মাত্র ৮ রান করে হেরাথের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। এরপর মেহেদি মিরাজকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ২৭ ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সানজামুলকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৫৮ রান যোগ করেন ৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা মাহমুদুল্লাহ। এরইমাঝে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বাংলাদেশ দলপতি।
তবে দলীয় ৪৭৮ রানের মধ্যে নবম উইকেট হারালে বাংলাদেশের জন্য ৫শ’ রানের মাইলফলক স্পর্শ করা দুরহ হয়ে পড়ে । কিন্তু সেই কঠিন কাজটি শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমানকে করে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। দশম ও শেষ উইকেটে ৩৫ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ ও মুস্তাফিজুর। এর মধ্যে ২৫ রান অবদান রাখেন টাইগার দলপতি। আর ফিজের অবদান ছিলো ৮ রান। এই ৮ রানের মধ্যে শ্রীলংকার হেরাথকে একটি ছক্কাও মারেন ফিজ।
তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মোস্তাফিজ আউট হওয়াতে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৫১৩ রানে। এই নিয়ে সপ্তমবারের মতো পাঁচ বা ততোধিক দলীয় সংগ্রহ পেলো টাইগাররা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ বাংলাদেশের। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ফিজ ৮ রানে থামলেও, ৮৩ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ রান। শ্রীলংকার পক্ষে সুরাঙ্গা লাকমল-রঙ্গনা হেরাথ ৩টি করে, লক্ষণ সান্দাকান ২টি এবং দিলরুয়ান পেরেরা ১টি উইকেট নেন।
শ্রীলংকার সামনে ৫১৩ রানের বড় সংগ্রহ দাড় করিয়ে রেখে চা-বিরতির আগে ফিল্ডিং-এ নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৫তম বলেই লংকান ওপেনার দিমুত করুনারত্নকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের ডান-হাতি অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। এতে শ্রীলঙ্কাকে চেপে ধরার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
কিন্তু সেটি হতে দেননি আরেক ওপেনার কুসল মেন্ডিস ও ধনানঞ্জয়া ডি সিলভা। দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। তাই দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ১৮৭ রান হয় শ্রীলঙ্কার। মেন্ডিস ৮৩ রানে অপরাজিত থাকলেও, ডি সিলভা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন।