মোঃ শাহাজাদা হিরা.
সিনিয়ার স্টাফ রির্পোটার.
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেন ও র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক সাবেক সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বাকি নয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলাকে একটি হিসেবে গ্রহণ করে রায় দেন আদালত। সংক্ষিপ্ত রায়ে শুধুমাত্র আসামিদের সাজা ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলে জানান বিচারক।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের তিন কর্মকর্তা। এরা হলেন র্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে ১৮ আসামিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া মামলার অন্যতম তিন আসামি তারেক সাঈদ, নূর হোসেন ও বেলালসহ পাঁচ আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে নেওয়া হয়।
চাঞ্চল্যকর মামলার এ রায়কে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে আদালত চত্বর। সোমবার সকাল থেকে আদালত চত্বরের বাইরে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে সবাইকে তল্লাশি করে ঢোকানো হচ্ছে। আইনজীবী ছাড়া অন্য কাউকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন র্যাবের সদস্য। মামলার শুরু থেকেই র্যাবের সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি পলাতক।
সাত খুনের মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামিরা হলেন, চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর। কারাগারে থাকা বাকি আসামিরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)।
পলাতক আসামিরা হলেন করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও ১২ জন পলাতক রয়েছে।
আসামিদের দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও নানা সাক্ষ্য প্রমাণের উপর দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।