এ ম্যাচটা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নয়। রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম পর্বের ম্যাচ। এরপর ২৫ জানুয়ারি আবারো দেখা হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার। তার আগে শুক্রবার শেরে বাংলায় এবারের তিন জাতি ক্রিকেটে প্রথম সাক্ষাত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার।
বাংলাদেশ আগেও বহুবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছে। এটা হবে দু’দলের ৪২তম মোকাবিলা; কিন্তু আগামীকালকের ম্যাচ নিয়ে একটা অন্যরকম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভিন্ন আবহাওয়াও তৈরি হয়েছে।
শুক্রবারের বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ছাপিয়ে অনেকেই এটাকে বাংলাদেশ আর হাথুরুসিংহের লড়াই ভাবছেন। সেই আসর শুরুর আগে থেকে এ নিয়ে চলছে নানা কথা-বার্তা। ভাবটা এমন, শ্রীলঙ্কা নয়, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ একজনমাত্র ব্যক্তি। তিনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউজ বাহিনীর সাথে নয়, মাশরাফির দলের লড়াই হাথুুরুসিংহের সঙ্গে।
যদিও মাশরাফি বার বার এমন চিন্তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক কোনো ভাবেই ভাবতে চান না হাথুরু তাদের প্রতিাপক্ষ। আজও প্রেস কনফারেন্সে মাশরাফি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, আমরা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে ভাবছি না। তিনি আমাদের কোচ ছিলেন, এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। তিনি এখন শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ভাববেন। তাদের লক্ষ্য স্থির করবেন। আর আমরা আমাদের কাজ করবো।
একই কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরাও। বাংলাদেশের এ সাবেক ব্যাটিং কোচও জানিয়ে দিলেন, শুক্রবারের লড়াই বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার। হাথুরুর আর বাংলাদেশের নয়।
মাশরাফি আর সামারাবিরার কথায় একটা চরম সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাহলো এখন পেশাদার যুগ। আজ যিনি এক দলের কোচ, তিনি আগামীকাল অন্য দলের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেবেন- এটাই বাস্তব।
চরম সত্য হলো হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। প্রায় চার বছর তিনি বাংলাদেশের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এখন আর তিনি টাইগারদের কোচ নন। এটা ক্রিকেটে নতুন নয়। ডেভ হোয়াটমোরের কোচিংয়ে শ্রীলঙ্কা ১৯৯৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই ডেভ হোয়াটমোর পরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর জিম্বাবুয়ের কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন। ডেভ হোয়াটমোরের কোচিংয়ে বাংলাদেশ যখন শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম খেলতে নামে তখন কিন্তু এত কথা হয়নি।
একইভাবে সাবেক ক্যারিবীয় ক্রিকেটার ফিল সিমন্সও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডকে কোচিং করিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি আফগানিস্তানেরও কোচ হয়েছেন। সিমন্সের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজও কিন্তু আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলেছে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
দল পাল্টালেই তাদের পুরোন দলের সাথে খেলা হবে, সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু এবার হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে কথা-বার্তা হচ্ছে বেশি। কারো কারো কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে, এ আসরে মাশরাফি, তামিম, সাকিবদের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী হলেন হাথুরু। তাকে হারানোটাই হবে প্রধান কাজ।
কেউ কেউ আবার গরম কড়াইতে তেল ঢালছেন। তারা এমন ভাব দেখাচ্ছেন, যেন তিন জাতি আসরে শ্রীলঙ্কা নয়, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ হাথুরু। এখন শ্রীলঙ্কার কাছে হারা মানে হবে হাথুরুর কাছে পরাজয়। তাই কিছুতেই হারা চলবে না।
তা কেন হবে? যারা এমন ভাবছেন বা বলছেন, তাদের জন্য একটা তথ্য- বাংলাদেশ এর আগে ৪১ বার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে মাত্র পাঁচবার জিতেছে। আর ৩৬ বারই হেরেছে। যার একটি ম্যাচেও হাথুরুসিংহে শ্রীলঙ্কার কোচ ছিলেন না।
তাহলে আগামীকাল যদি বাংলাদেশ হেরেও যায়, তাহলে কি হবে? বাংলাদেশের ক্রিকেট শেষ হয়ে যাবে? সেটা হাথুরুসিংহের কাছে টিম বাংলাদেশের হার হবে কেন? বিষয়টা আসলে এমন দাঁড়িয়েছে- হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে শ্রীলঙ্কার কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই একপক্ষ ধরে নিয়েছেন কিছুতেই শ্রীলঙ্কার কাছে হারা চলবে না।
এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। কোচ রদবদল হতেই পারে। হয়ও। আগামীতেও হবে; কিন্তু কিছুতেই তার কাছে হারা যাবে না- এটা নেতিবাচক মানসিকতা। ভুলে গেলে চলবে না, হাথুরুসিংহে সবে শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েছেন। এটাই তার প্রথম এসাইনমেন্ট।
শ্রীলঙ্কার হয়ে এ আসরে যারা খেলছেন তাদের প্রায় সবাই অনেকদিন ধরেই একসঙ্গে খেলছেন। হাথুরু যেমন পরিকল্পনাই করুন আর কৌশলই আঁটেন না কেন, মাঠে খেলবেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। তারা সে কৌশল ও লক্ষ্য পরিকল্পনার যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই কেবল হাথুরুর কৌশল সফল বলে গণ্য হবে।
কোচ যত কৌশল আর ছক কষেন না কেন, আসল ভূমিকাটা ক্রিকেটারদের। মাঠে ২২ গজে ব্যাট-বল হাতে লড়াই করেন দুই দলের ২২ ক্রিকেটার। কোচ থাকেন ড্রেসিং রুম আর ডাগআউটে বসে।
বাংলাদেশের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কোচ রিচার্ড হ্যালসল তো একদিন আগে এমন কথাই বলে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘হাথুরুসিংহে তো আর মাঠে এসে রান করে দেবেন না, উইকেটও নিয়ে দেবেন না। ক্রিকেটাররা খেলতে না পারলে কোনো পরিকল্পনারই দাম নেই।’
ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সটাই শেষ কথা। শ্রীলঙ্কান লাইনআপে বেশ কিছু মেধাবি ও ভাল মানের ক্রিকেটার আছেন। যাদের অতীতেও বাংলাদেশের সাথে ভাল খেলার রেকর্ড আছে। উপুল থারাঙ্গা, কুশল পেরেরা আর অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউজ ও থিসারা পেরেরার আগেও বাংলাদেরে বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স আছে। শুক্রবার যদি তাদের নৈপুণ্যের কাছে বাংলাদেশ হেরে যায়, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই হাথুরুর কাছে মাশরাফিদের হার হবে না।