মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শততম ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলংকাকে ১২ রানে হারিয়ে জয় পেল জিম্বাবুয়ে। ফলে এই ঐতিহাসিক ম্যাচে জয়ী হয়ে ইতিহাসের সাক্ষীও হয়ে গেল দলটি। বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের ম্যাচ দিয়েই এই ম্যাঠের ওয়ানডে ম্যাচের অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে হারলেও গতকাল শততম ম্যাচে জয়ী হয়েছে জিম্বুাবুয়ে। সেইসাথে শ্রীলংকাকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় ম্যাচে ভালোই ঘুরে দাড়াল দলটি। গতকাল আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে করে ২৯০ রান। ফলে জয়ের জন্য ২৯১ রানের টার্গেট ছিল শ্রীলংকার সামনে। কিন্তু শ্রীলংকা ২৭৮ রানে অল আউট হলে জিম্বাবুয়ে জয় পায় ১২ রানে। ফলে ত্রিদেশীয় এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারলেও শ্রীলংকাকে হারিয়ে জয় পেয়েছে দলটি।
জয়ের জন্য শ্রীলংকার সামনে ২৯১ রানের টার্গেটটা একটু কঠিনই ছিল। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে লংকানরা। দু-ওপেনার কুসাল পেরেপা আর উপল থারাঙ্গা মিলে দলকে ৪৬ রানে নিয়ে এই জুটির ভাংগন ধরে। তবে থারাঙ্গা ১১ রানে জারভিস এর বলে আউট হলেও দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেন পেরেরা। তবে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগে মেন্ডিস আউট হলে একটু চাপেই পড়ে লংকানরা। কারণ ৪৭ রানেই দলটিকে হারাতে হয় প্রথম দুই উইকেট। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ ভাবে ঘুরে দাড়ায় দলটি। পেরেরার সাথে জুটি করে অধিনায়ক ম্যাথুস দলকে ঠিকই এগিয়ে নেন। কারণ এই জুটি ভাংগার আগেই শ্রীলংকা পৌঁছে যায় ১৩২ রানে। দলীয় ১৪২ রানে পেরেরার বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। তবে আউট হওয়ার আগে ওপেনার পেরেরা খেলেন ৮২ রানের একটি ইনিংস। ৮৩ বলে ৮ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো ছিল ওপেনার পেরেরার ইনিংসটি। পেররার বিদায়ে ম্যাথুস এর সাথে ব্যট করতে নেমে দলকে এগিয়ে নিতে চেস্টা করে চন্ডিমাল। কিন্তু দলীয় ১৫৭ রানে ফিরতে হয় অধিনায়ক ম্যাথুসকে। আউট হওয়ার আগে ম্যাথুস করেন ৪২ রান। ফলে ১৫৭ রানে শ্রীলংকা হারায় ৪ উইকেট। দলীয় ৮১ রানে শ্রীলংকা হারায় চন্ডিমালের উইকেট। আউট হওয়ার আগে চন্ডিমাল করেন ৩৪ রান। চন্ডিমালের বিদায়ে দলকে জয় এনে দেয়ার দায়িত্ব পদে থিসারা পেরেরার উপর। তবে দলকে তিনি ঠিকই জয়ের খুব কাছে নিয়েই আউট হন। দলীয় ২৭৫ রানে পেরেরা আউট হওয়ার আগে করেন ৬৪ রান। পেরেরার বিদায়ে আর জয়ী হয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি শ্রীলংকা। কারণ ৪৮.১ ওভারে ২৭৮ রানে অলআউট হয় দলটি। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ছাতারা একাই নেন ৪ উইকেট। বিজয়ী দলের পক্ষে সিকান্দার রাজা হন ম্যাচ সেরা। এর আগে, মিরপুর স্টেডিয়ামে শততম ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং-এ নেমে দুর্দান্ত শুরু করে জিম্বাবুয়ে। ১৩ ওভারেই স্কোর বোর্ডে ৭৫ রান তুলে ফেলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার মাসাকাদজা ও সোলেমন মির। মিরকে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে থামিয়ে দিয়ে শ্রীলংকাকে ম্যাচে প্রথম সাফল্য এনে দেন শ্রীলংকার মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা। ৩৭ বল মোকাবেলায় ৫টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান মির। তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ক্রেইগ আরভিন। মাত্র ২ রান করে আউট হন তিনি। দলীয় ৮৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজটা ভালোভাবেই করেন মাসাকাদজা। দলের স্কোর সচল রাখার পাশাপাশি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ- সেঞ্চুরি তুলে নেন মাসাকাদজা। তবে শ্রীলংকার বিপক্ষে এটি মাসাকাদজার চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি। মাসাকাদজার দুর্দান্ত ইনিংসের বাধা হয়ে দাঁড়ান শ্রীলংকার মিডিয়াম পেসার আসলে গুনারতেœ। ব্যক্তিগত ৭৩ রানেই মাসাকাদজাকে থামিয়ে দেন তিনি। ৮৩ বল মোকাবেলা করে ১০টি চার মেরেছেন মাসাকাদজা। তৃতীয় উইকেটে টেইলরের সাথে ৫৭ রান যোগ করেন তিনি। মাসাকাদজার বিদায়ের পর দলের ইনিংস বড় করার দায়িত্ব ছিলো টেইলরের। কিন্তু ৪টি চারে ৫১ বলে ৩৮ রানেই বিদায় নেন তিনি। তার বিদায়ের ক্ষত দ্রুতই ভুলে যায় জিম্বাবুয়ে। কারন ব্যাট হাতে শ্রীলংকার বোলারদের বিপক্ষে দাপটের সাথে লড়াই করেন রাজা। সাথে সঙ্গী হিসেবে পান ম্যালকম ওয়ালার ও পিটার মুরকে। পঞ্চম উইকেটে ওয়ালারের সাথে ৬১ বলে ৫৭ ও ষষ্ঠ উইকেটে মুরের সাথে ৩৯ বলে ৬১ রান দলের স্কোরে যোগ করেন রাজা। ওয়ালার ৩৫ বলে ২৯ ও মুর ১৮ বলে ১৯ রান করে আউট হন। তবে ইনিংস শেষে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন রাজা। দশম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এজন্য মাত্র ৬৭ বল খেলেন রাজা। শ্রীলংকার পক্ষে গুনারতেœ ৩টি ও পেরেরা ২টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ২৯০/৬ (৫০ ওভার)
শ্রীলংকা : ২৭৮/১০ (৪৮.১ ওভার)
জিম্বাবুয়ে ১২ রানে জয়ী।