পাবনা প্রতিনিধি : নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার খবর শুনার পর তার মা সালমা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেছেন, আমার ছেলে অপরাধ করছে, তাই তার শাস্তি হইছে, আমার কিছু বলার নাই।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে টেলিভিশনে মারজান নিহতের খবর জানতে পারেন এলাকাবাসীসহ তার স্বজনরা। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। মারজানের মৃত্যুতে খুশি আফুরিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষ। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মারজানের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে সাধারণ মানুষের ভীড়। কেউ আসছেন, কেউ ফিরছেন। শোকাচ্ছন্ন স্বজনরা। মারজানের মা সালমা খাতুনকে দেখা গেলো ঘরে বসে কাঁদছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
এ সময় মারজানের মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মারজানের মতো ছেলে এলাকায় নেই, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। তবে আমার ছেলে অপরাধ করছে, তাই তার শাস্তি হইছে, আমার কিছু বলার নাই। আমার কোনো দাবি বা চাওয়া পাওয়া কিছু নাই। আমি তো আগেই বলেছিলাম, মারজান যদি অপরাধী হয় তাহলে তার সাজা হোক।’
এদিকে শোকে বিহবল মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সকাল আটটার দিকে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ছেলের নিহতের খবর জানতে পারি। এখন মারজান যদি অপরাধী হয় তাহলে সরকার তার বিচার করছে। তবে ছেলের মুখ থেকে শুনতে পারলাম না যে, সে সত্যি জঙ্গি কার্যক্রমে সাথে জড়িত কিনা। এখন সরকার যদি আমার ছেলের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে তাহলে দাফনের ব্যবস্থা করব। আর না দিলে আমার সামর্থ্য নেই যে ঢাকায় গিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসবো।’
বাবা-মায়ের ১০ সন্তানের মধ্যে মারজান ছিলেন দ্বিতীয়। পড়ালেখা করতেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে। গত বছর জানুয়ারিতে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে এসে খালাতো বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করে চলে যান চট্টগ্রামে। তারপর থেকে যোগাযোগ ছিল না পরিবারের সাথে। এর মাঝে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনায় আসে মারজানের নাম।
গত বছর আগস্ট মাসে তার ছবি প্রকাশ করে নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে মারজানকে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার হিসেবে দাবি করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর ১৫ আগষ্ট তার নাম পরিচয় উদঘাটন করেন পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা।
এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, মারজান এলাকায় থাকার সময় ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কিভাবে সে জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়িয়েছে, তা কেউ বুঝতে পারেননি। তবে সে যেহেতু সন্ত্রাসের পথে ছিল, তাই তার মৃত্যুতে খুশি তারা। এলাকাবাসীর দাবি, আর যেন কেউ এভাবে জঙ্গি সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়ায়। সরকার জঙ্গি উৎখাতের মাধ্যমে দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ডিএমপির কাউন্টার টেরররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারজান এবং তার এক সহযোগী সাদ্দাম নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সিটির উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম।