এখনো পাঁচ মাস বাকি লা লিগা শেষ হতে। তবে বার্সেলোনা আজই শিরোপা উৎসব করে ফেলতে পারে। বার্নাব্যুতে এসে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গেল বার্সা। রিয়ালের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে গিয়ে বড়দিনের ছুটিতে বার্সা। মেসি-সুয়ারেজদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করল রোনালদোরা । এই জুটি গোল করেছেন। গোল করেছেন অ্যালেক্স ভিদালও।
অথচ ম্যাচের শুরুতে উজ্জ্বল ছিল রিয়ালই। দ্বিতীয় মিনিটেই গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর! সেটা অফসাইডে বাতিল হলেও চমকে উঠতে হয়েছিল। কারণ, এ ম্যাচে এত দ্রুত তো গোল হওয়ার কথা নয়। অতীত ইতিহাস কিংবা দুই দলের দ্বৈরথ চিন্তা করে এমন কথা নয়। দুই দলের একাদশ দেখেই মনে হলো, এ ম্যাচে আর যা–ই হোক, গোল–বন্যা হচ্ছে না।
রিয়ালের মাঠে খেলতে এসেছে বার্সেলোনা। লিগে এগিয়ে আছে ১১ পয়েন্টে। এ ম্যাচে যে ভালভার্দে সাবধানী হবেন তা জানা ছিল। তাই বার্সার ৪-৪-২ ফরম্যাশন দেখে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। অবাক করেছেন জিদান। গ্যারেথ বেল থাকছেন না শুরুতে জানা ছিল। তাঁর জায়গায় ইস্কো না লুকাস ভাসকেজ, সেটাই ছিল প্রশ্ন। সেখানে প্রথম একাদশে নামলেন কোভাচিচ। অর্থাৎ ৪-৪-২!
মাঝমাঠেই যেখানে ট্যাকটিকসের লড়াই হবে, সেটার ইঙ্গিত ফরম্যাশনেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তো এমন ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই রোনালদোর ওই হেড চমকে দিয়েছিল। তবে ১০ মিনিটে চমকটা আরও বাড়ল। যখন প্রায় পেনাল্টি স্পটে পাওয়া বলটি থেকে ফাঁকায় থাকা রোনালদো পা ছোঁয়াতে পারলেন না। সাধারণত বিশ্বস্ত বাঁ পা বলে শট নিলেই এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল। কিন্তু পায়ে-বলে হলো না রোনালদোর।
শুরু থেকে চেপে বসা রিয়ালের কবজা থেকে বার্সার মুক্তি মিলল ১৫ মিনিট পেরিয়ে। ১৮ মিনিটে প্রথম রিয়ালের বক্সে বল নিয়ে বার্সা ঢুকতে পারল।ম্যাচের পরবর্তী ভালো সুযোগটাও বার্সেলোনা পেয়েছে। ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকা মেসি থ্রু বলে খুঁজে নিলেন পাওলিনহোকে। দারুণ এক দৌড়ে নিজেকে ফাঁকায় নিয়ে যাওয়া পাওলিনহো শটও নিয়েছিলেন দারুণ। তবে কেইলর নাভাসের সেভে বেঁচে গেল রিয়াল। সেখান থেকে পাওয়া কর্নার থেকেও গোল করতে পারত বার্সা। কিন্তু ফাঁকায় থাকা পিকে বল নিয়ন্ত্রণেই নিতে পারেননি।
প্রতি আক্রমণে উঠল রিয়াল। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়া রোনালদোর শট দারুণ এক সেভে গোলে যেতে দেননি মার্ক টের স্টেগেন। ৩৪ মিনিটে বেনজেমাকেও গোল করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। কিন্তু বেনজেমা পারেননি সে সুযোগ কাজে লাগাতে। ৩৯ মিনিটে পাওলিনহোকে আরেকবার গোলবঞ্চিত করলেন নাভাস। জোরালো হেডটা কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন রিয়াল গোলরক্ষক।
তবে প্রথমার্ধের সবচেয়ে ভালো সুযোগটা দেখা গেছে ৪২ মিনিটে। মার্সেলোর ক্রস থেকে বেনজেমার হেড টের স্টেগেনকে ফাঁকি দিলেও গোলপোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি বাড়ায় বার্সেলোনা। ৫৩ মিনিটেই এর ফল মেলে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগোলেন রাকিটিচ। সেটা বক্সের কাছে এসে ডান প্রান্তে সার্জি রবার্তোকে দিলেন। রবার্তোর ক্রস খুঁজে পেল সুয়ারেজকে। এবার আর বাধা হতে পারলেন না নাভাস। রিয়ালের মাঠে এগিয়ে গেল বার্সা (১-০)।
ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল ৬২ মিনিটে। মেসির এক পাসে রিয়ালের ডিফেন্স ছত্রখান। সুয়ারেজের শট ঠেকিয়ে দিলেন নাভাস। সুয়ারেজের ফিরতি শট পোস্টে লেগে ফিরে এলে পাওলিনহো হেড নেন। সে বল আটকাতে হাত ব্যবহার করেন কারভাহাল। সরাসরি লাল কার্ডের সঙ্গে পেনাল্টি।
পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করলেন মেসি (২-০)। ৬৯ মিনিটে মেসির শট ঠেকিয়ে ব্যবধান বাড়াতে দেননি নাভাস।
বদলি নেমেই রিয়ালের খেলায় গতি এনেছেন বেল। ৭৭ ও ৭৮ মিনিটে তাঁকে দুবার গোলবঞ্চিত করেছেন টের স্টেগেন। ৮০ মিনিটে ইনিয়েস্তার বদলি নামা সেমেদো ৩-০ প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু এবারও নাভাস বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। ৮১ মিনিটে রামোস সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যবধান কমাতে পারেননি। ৮২ মিনিটেও সুযোগ পেয়েছিলেন রামোস। এবার রোনালদোর পাসে পা ছোঁয়াতে পারেননি।
যোগ করা সময়ে কফিনে পেরেক ঠুকেছেন সেই মেসি। ডান প্রান্ত থেকে তাঁর দেওয়া পাস থেকে গোল করার কাজ সেরেছেন অ্যালেক্স ভিদাল। শুধু রিয়াল নয়; আজকের লড়াইয়ে মেসির কাছে হারলেন রোনালদোও!