সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে জেরুজালেম প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে একটি খসড়া প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সব সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, শুধু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে জেরুজালেম প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত এই শহরে কোনো দেশ তাদের দূতাবাস স্থাপন করবে না। জাতিসংঘের এ ঘোষিত অবস্থান সত্ত্বেও কেউ যদি এখানে তাদের দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তার ফলে জেরুজালেম শহরের আইনগত অবস্থানের ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। কোনো দেশ এ রকম সিদ্ধান্ত নিলে তা বাতিলের কথাও এই প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই খসড়া প্রস্তাবের কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখিত হয়নি, যদিও কোনো সন্দেহ নেই ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের যে ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন ও আরব রাষ্ট্রগুলো। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণকে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এদিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলে তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যাবে। এ লক্ষ্যে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। একই দিন পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি নিকোলাই ম্লাদেনভ অধিকৃত এলাকায় অব্যাহত ইহুদি বসতি স্থাপনের বিবরণ তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, এর ফলে একদিকে উত্তেজনা বাড়ছে ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বিঘ্নিত হচ্ছে। উভয় পক্ষই ক্রমে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় দুই পক্ষের নেতৃত্বেই চরমপন্থীরা নিজেদের অবস্থান সংহত করছে। জেরুজালেম প্রশ্নে খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভেটো দেবে তাতে কোনো সন্দেহই ছিল না। বিগত মার্কিন প্রশাসনের অনুসৃত নীতি পরিবর্তন করে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন নিজের অবস্থান আগেই পরিষ্কার করেছিল। তবে এই ভোটের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রশ্নে ওয়াশিংটন কতটা একা হয়ে পড়েছে, তাও প্রমাণিত হলো। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পরিষদের অন্য সব সদস্য যে প্রস্তাবটি সমর্থন করে তা থেকে স্পষ্ট, এই প্রশ্নে ওয়াশিংটন তার নিকটতম মিত্রদেরও দলে টানতে সমর্থ হয়নি। এক ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের কোনো রাজধানীতেই ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণা আদৃত হয়নি। এমনকি খোদ ইসরায়েলে উদারনৈতিক মহলে সিদ্ধান্তটি সমালোচিত হয়েছে। দৈনিক হারেৎস-এর মতে, শুধু ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানদের খুশি করতেই ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত।