বৃহস্পতিবার , ৫ জানুয়ারি ২০১৭ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

‘পুরো বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রনহীন অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে’ ।।

প্রতিবেদক
alltimeBDnews24
জানুয়ারি ৫, ২০১৭ ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়ষ সংশোধনী গত বছর ৫মে হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল হওয়ায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্বেও অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সরকার প্রণয়ন করছে না।

এ অবস্থায় পুরো বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) ষোড়ষ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শুনানিকালে আপিল বিভাগ এই মন্তব্য করেন।

আদাল বলেন, পুরো বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রনহীন অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো শৃংখলা বিধিমালা নেই। উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো আইন নেই। একটা শূন্যতা চলছে। শৃংখলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আবেদনের শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানির জন্য সময় চান। সেই সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আদালত আপিল শুনানির জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের রায় অনেক বড়। প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন। এজন্য চার সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন দিয়েছি। তার কথার প্রেক্ষিতে আদালত জিজ্ঞেস করেন, এটা নিয়ে দ্রুত শুনানির প্রয়োজন আছে কিনা? জবাবে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, অবশ্যই জরুরি। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুটো অঙ্গের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করার জন্য হাইকোর্টের রায়ে অনেকগুলো নির্মম মন্তব্য করা হয়েছে। আদালত বলেন, আমরা বিষয়টি (আপিল বিভাগের) পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি করতে চাই। এর প্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা কিন্তু ক্রান্তিকাল। আপনারা (বিচার বিভাগ) নিজেদের বিচার নিজেরাই করতে যাচ্ছেন। তখন আদালত বলেন, আপনি একপেশে মন্তব্য করবেন না। আমাদের একটা রাস্তায় আসতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুঃখিত। হয়তো আমি আদালতকে বুঝিয়ে বলতে পারছি না।

আদালত বলেন, পুরো বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রনহীন অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো শৃংখলা বিধিমালা নেই। উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো আইন নেই। একটা শূন্যতা চলছে। শৃংখলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই সব পেশারই একটি শৃংখলা বিধি থাকা দরকার।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিম্ন আদালতের একজন বিচারক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার বিভাগে কর্মরত থাকবেন, এটা আশ্চর্যজনক।

আদালত বলেন, আলাপ-আলোচনা ছাড়াই আপনারা এমন কিছু করে থাকেন যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে আমরা বিস্মিত হয়ে যাই। আলাপ-আলোচনা করে করলে হয়তো এমন সমস্যার সৃষ্টি হতো না।

আদালত আরো বলেন, ভারত সরকার সেদেশে বিচারক নিয়োগে একটা আইন করেছিল। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট সে আইন বাতিল করে দিয়েছে। আমরাও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ৫ম, ৮ম ও ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ। এটাকে পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু আপনারা সেটিই করেছেন। বিচার বিভাগে স্বাধীনতা শুধু কোনো একক বিচারকের বিষয় নয়, এটা পুরো বিচার বিভাগের বিষয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ১৬তম সংশোধনীর রায়ে হাইকোর্ট সংসদ সদস্যদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা দূর্ভাগ্যজনক। আদালত বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিট আবদেনকারীপক্ষ তাড়াহুড়ো করে মামলা শুনানি করতে চায়।

আদালত বলেন, উনাদের দোষ দেবেন না। উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলা জট রয়েছে। যে যত বড় কর্মকর্তাই হোক, একটা শৃংখলাবিধি থাকা দরকার। এ ধরনের মামলা যত তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করা যায়, ততই রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। আমরা কোনো মামলাই ফেলে রাখি না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যখন সংবিধান সংশোধন করা হয়, তখনই বিচারক অপসারণের জন্য একটা আইন থাকবে বলে বলা হয়। ওই আইন ভাল না খারাপ তার বিচার হবে এখানে। আর ওই আইনের স্টেকহোল্ডার হলেন আপনারা, বিচারকরা। এজন্য এ আইনের ওপর আপনাদের মতামত দেওয়া দরকার ছিল।

আদালত বলেন, এ আইন আমরা দেখবো না। যখন হাইকোর্টে রিট মামলা বিচারাধীন ছিল। তখনই আপনারা তাড়াহুড়ো করে ওই আইনের খসড়া প্রনয়ন করেছেন। বিচারাধীন থাকাবস্থায় আপনারা যে আইনের খসড়া করেছেন, তা আমরা গ্রহণ করবো না। এটাই আমাদের বার্তা। সরকারকে বিষয়টি অবহিত করবেন।

আইনমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে আদালত বলেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের যোগাযোগ (সমন্বয়) যিনি করেন তিনি এখানে এসে এক ধনেরর কথা বলেন। আবার মন্ত্রী পরিষদে ও সংসদে ভিন্ন কথা বলেন।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী।

এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন।

গত ১১ আগস্ট তিন সদস্যের বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের রায় প্রদান করা হয়। অপরদিকে রিট খারিজ করে অপর বিচারপতির দেওয়া মতামতসহ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২শ’ ৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। ষোড়ষ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটিই আবার দেওয়া হয়েছিল সংসদকে।

(Visited ২ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - অর্থনীতি