মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এবং মক্কা শরীফের ব্যাঙ্গাত্মক ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে রংপুরে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বিকেলে রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়ে হাবিব নামে স্থানীয় এক যুবক (২৭) নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৭ পুলিশসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন। বিক্ষোভকারীরা হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। আগুনে ১৮টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শর্টগান ও রাবার বুলেটবিদ্ধ ১১জন বিক্ষোভকারীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারি পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, এদের মধ্যে মাহাবুবুল (২৫), জামিল (২৬), হাবিবুর রহমান (৩০),আলিম (৩২), জাহাঙ্গীর (২৮),আমিন (২৬) ও রিপনের (২৮) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের পেটে ও মাথায় বুলেটবিদ্ধ হয়েছে। অন্যদের পায়ে ও হাতে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান হাবিবুর রহমান।
তিনি শলেয়াশাহ এলাকার একরামুল হকের ছেলে বলে ভর্তি রেজিস্ট্রারে উল্লেখ রয়েছে। বিপুল সংখ্যক সর্টগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
খলেয়া ইউনিয়ন সদর উপজেলার অধিন হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে গঙ্গাচড়া থানা পুলিশ। গঙ্গাচড়া থানার ওসি জিন্নাত আলী জানান, ঠাকুরপাড়া এলাকার টিটু রায় পেশায় কবিরাজ। গত সপ্তাহে তিনি নাকি তার ফেসবুকে নবীজি ও মক্কা শরীফের ব্যাঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ করবে করবে-এমন খবর পেয়ে বেলা তিনটা থেকে গঙ্গাচড়া, কোতোয়ালী ও তারাগঞ্জ থানা পুলিশ এলাকায় অবস্থান নেয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ ও বালাবাড়ি গ্রাম এবং পাশের মমিনপুর গ্রামের ৮-১০ হাজার লোক লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ও লাঠি দিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। এরই এক পর্যায়ে তারা ঠাকুরপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে।
আগুনে টিটু রায়ের ৩টি, সুধীর রায়ের ৬টি, অমূল্য রায়, বিধান রায় ও কৌশল্য রায়ের ২টি করে ৬টি, কুলীন রায়, ক্ষিরোধ রায় ও দীনেশ রায়ের ১টি করে ৩টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে গঙ্গাচড়া থানার ওসি জানিয়েছেন।
টিটু রায়ের মা জীতেন বালা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শত শত মানুষ আসি তিনটা ঘরোত আগুন নাগে দেলে। চৌকের পলোকে ঘরগুল্যা পুড়ি ছাই হয়া গেলো। ঘরের কিছুই রক্ষা করব্যার পারি নাই। ‘
সুধীর রায় বলেন, ‘৪-৫টা মানুষ আসি পেট্রোল ঢালি মোর একটা ঘরোত আগুন নাগে দেয়। ওই আগুনোত মোর ছয়টা ঘরের সউগ পুুড়ি য়ায়’। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ মাষ্টার জানান, পুলিশ বৃষ্টির মত রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলি ছুড়েছে।
রংপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুর রহমান জানান, বিক্ষোভকরারীদের ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে ৭ পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদেরকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণ সর্টগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে তা এ মূহুর্তে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
এদিকে টিটু রায়ের গ্রেফতারের দাবিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে কয়েকশ’ মানুষ। পাগলাপীর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, কয়েকদিন আগে নবীজি ও মক্কা শরীফের ব্যাঙ্গাত্মক ছবি টিটু রায় তার ফেসবুকে পোস্ট করে। এ অভিযোগে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে টিটুকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করি।
এছাড়া একই অভিযোগে খলেয়া ইউনিয়নের লালচাঁদপুর গ্রামের মুদি দোকানী আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে টিটু রায়কে আসামি করে ২৯ অক্টোবর গঙ্গচড়া থানায় মামলা করেন।
গঙ্গাচড়া থানার ওসি জিন্নাত হোসেন বলেন, মামলা নেওয়ার পর আমরা টিটু রায়ের বাড়িতে যাই। তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারি টিটু রায় তার দুই স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বাজার এলাকায় বাস করেন।