কলামিস্টঃ আর.এম।
আমরা একটা বিষইয়ের মাঝে ঢুকে যাচ্ছি জ্যামিতিক হারে সেটা হলো প্রশ্নপত্র ফাঁস। আমরা যেন ধড়েই নিয়েছি পরীক্ষা মানেই যেন প্রশ্ন ফাঁস! এটি যেন বর্তমানে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। নিয়োগ পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় একের পর এক ঘটে চলেছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো জঘন্য ঘটনা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ডিনায়েল সিনড্রোম’ বা অস্বীকার করা। এখন পরিস্থিতি এমন যে প্রায় সব জায়গাতেই সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা সবারই জানা আছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা বাতিল না করে তড়িঘড়ি ফল প্রকাশ করেছে। এটাও কিন্তু ডিনায়েল সিনড্রোম বা অস্বীকারের পর্যায়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনও শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড ধরা হয়। সেখানেও যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? তবে মিথ্যার ফাঁদে পা দিচ্ছে নাকি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা?
প্রশ্ন ফাঁস এখন গোটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। গত কয়েক বছরে প্রশ্ন ফাঁসের একের পর এক ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ দেশে ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৮২ বার বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরি ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ২০১৪ সালে জেএসসি, পিইসি, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ২০১৫ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের গণিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও গত ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বাতিল করা হয়। এভাবে নষ্ট হচ্ছে দেশের তরুণদের সোনালি স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। দেশ হয়ে পড়ছে মেধাশূন্য। জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ করার অন্যতম অস্ত্রে পরিণত হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস।
একদিকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে ২০১৫ সালের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছর করা হয়েছে। আমরা বিবেকহীন মানুষ এতটাই জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছি যে, দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করছি না। এ পরিস্থিতির অবসান জরুরি। জাতিকে প্রশ্ন ফাঁসের হাত থেকে উদ্ধার করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের সুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে আসা করি।