ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল মালির গোলকিপার কোইতা। ম্যাচ হারের সব দায় হয়তো সে নিজেই মনে মনে নিয়ে ফেলেছে!
সতীর্থরাই সামলাল। সঙ্গ দিল ব্রাজিলের ফুটবলাররাও।
শেষ বেলায় কলকাতার সমর্থকদের শুভেচ্ছা পেল দুই দলই। ব্রাজিল গ্যালারির দিকে যেতেই, চিৎকারে ফেটে পড়ল গোটা স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে জ্বলে উঠল মোবাইলের আলো। ঠিক যেন দেওয়ালি ফিরে এল। কে বলবে এটা ফাইনাল ছিল না?
শুরুটা করেছিল মালিই। বিশ্বকাপের শুরু থেকে যে চমক দিয়ে উঠে এসেছিল গত বারের রানার্সরা, তাতে মনে হচ্ছিল ফাইনালও খেলে দিতে পারে। কিন্তু, হেরে যেতে হয় স্পেনের কাছে। তৃতীয়-চতুর্থ স্থানের লড়াইয়ে সামনে ব্রাজিল এসে যাওয়ায় শুরু থেকেই তেড়েফুড়ে খেলতে শুরু করে মালি। প্রথম থেকে পর পর আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল ব্রাজিল বক্সে। কিন্তু, ফিনিশিং-এর অভাবে ভুগল আফ্রিকার এই দল। শুধু প্রথমার্ধ নয়, দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচর রাশ ছিল মালির হাতেই। ব্রাজিল বেশির ভাগ সময়েই রক্ষণ সামলে গেল— এতটাই আক্রমণ শানিয়েছিল মালি। কিন্তু, সবটাই হারিয়ে গেল বক্সের মধ্যে। ব্রাজিলের পায়ের জটলায় বার বার আটকে গেল মালির গোলমুখী শট। আর এখানেই ব্রাজিলের থেকে পিছিয়ে পড়ল মালি।
জয়ের পর। ছবি ফিফার সৌজন্যে।
ব্রাজিল দু’টি সুযোগ পেল, যা কাজে লাগিয়ে নিল তারা নিখুঁত ভাবে।
মালির হারের পিছনে অনেকটাই ভূমিকা রেখে গেল তাদের গোলকিপার ইউসুফ কোইতা। প্রথম গোল যখন তারা হজম করল, তার আগে পর্যন্ত আক্রমণে ছিল শুধুই মালি। সেখান থেকেই ৫৫ মিনিটে ব্রাজিলের একটা কাউন্টার অ্যাটাক। একাই বল নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বেশ দুর্বল শটই নিয়েছিল ব্রাজিলের অ্যালান। গোলের নীচে তখন শুধু গোলকিপার। বল ধরতে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেই সব থেকে বড় ভুল করে গেল কোইতা। বল হাত থেকে স্লিপ করে দু’পায়ের ফাঁক গলে গড়াতে গড়াতে চলে গেল গোলে। ফেরার সময় পেল না কোইতা।
ঘিরে ধরে হতাশা যখন। গোল খাওয়ার পর মালি খেলোয়াড়। ছবি ফিফার সৌজন্যে।
৫৫ মিনিটের পর আবার ৮৭ মিনিট। সেই গোলকিপারের ভুল। আবারও জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোল হজম করতে হল তাকে। এ বার ব্রাজিলের গোলদাতা পরিবর্ত হিসেবে নামা অ্যালবার্তো। যদিও এই গোলের পিছনে মালি ডিফেন্ডারদেরও দায় থেকে যাবে।
ব্রাজিলের পুরো দলে এক জনকেই দেখা গেল দুর্গ রক্ষা করতে। সে গোলকিপার গ্যাব্রিয়েল ব্রাজাও। ৩৯ মিনিটে সালাম জিদ্দৌর যে শট মাথার উপর দিয়ে চেটোর আঘাতে বাইরে পাঠালেন, সেই সময় ওই দক্ষতা না দেখাতে পারলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত মালি। আর শেষ বেলায় ডান দিকে ঝাঁপিয়ে মালির ব্যবধান কমানোর রাস্তাও আটকাল সেই ব্রাজাও। ম্যাচের মাঝে অসুস্থ হয়ে বমিও করতে দেখা গেল ব্রাজিল গোলকিপারকে। কিন্তু, গোলের নীচে ফিরতেই আবার স্বমহিমায়।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েই শেষ করল ব্রাজিল। মালি চতুর্থ।
ব্রাজিল: ব্রাজাও, ওয়েসলি, ভিতাও, লুকাস, ভিক্টর (রডরিগো), ওয়েভারসন, পাওলিনহো, মার্ককোস, লিনকন (ইউরি), অ্যালান (রডরিগো), ব্রেনার।
মালি: কোইতা, হায়দারা, ত্রাওরে, কোনাতে, ফোফানা, মহম্মদ কামারা, দ্রামে (তুরে), জিদ্দৌ (সেমে কামারা), সামাকে (দৌকুরে), কানে, এনদিয়ায়ে।