কলামিস্টঃ আর.এম।।
একবার রাসূল (সা) কে জিজ্ঞাসা করা হলো:- ইয়া রাসূলুল্লাহ! সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য কে?
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন:- তোমার বাবা-মা, তোমার ভাই-বোন এবং এর সাথে তোমার সেই খাদেম, যে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এসব হচ্ছে ওয়াজিব হক।
নবীজি কাজের লোককে বলতেন খাদেম অর্থাৎ সেবক। নিজে যা খেতেন তা খাদেমকেও সহাস্যে খাওয়াতেন। সর্বোচ্চ সম্মান দিতেন। তো সেই নবীর অনুসারী হয়ে আমরা কি করছি?
আমার পরিচিত এক পরিবারের কথা বলছিঃ শুনেছি তাদের বাসায় পনের দিনের বেশি কোনো কাজের লোক টিকে না। সারাবছর কাজের লোক খুঁজতে খুঁজতে জামাই বাবাজি একদম ক্লান্ত।
সমস্যা একটাই কাজের লোক বা গৃহকর্মী কিছুতেই মালকিনের কাছে রহম পায় না। চুন থেকে পান খসলেই বকাঝকা! রাগের মাত্রা বাড়লে খুন্তি-ছ্যাকাও বাদ যায় না। মালকিন যে চালের ভাত যে তরকারি দিয়ে খান তার স্বাদ কাজের মানুষটিরও চেখে দেখতে ইচ্ছে করে। রান্নাটা যে ওইই করে। কাজের লোকের কিছুতেই ইচ্ছে করে না মালকিনের আন্ডারক্লথ ওয়াশ করতে। কিন্তু ওকে রোজ তাই করতে হয়। (হোয়াইট হাউজে বিপুল সেবাকর্মীর সান্নিধ্যে থাকাকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাশুড়ি নিজের আন্ডারক্লথ নিজেই ওয়াশ করতেন)।
চোখের সামনে সবাই মাছের টুকরো খেয়ে ওর জন্য ঝুলটা রেখে দিলে প্রাণে আর কাহাতক সয়? অথচ কাজের লোকের জিহবাটাও আমাদের মতোই। ওর যে মন আছে সেই মনের সাথে আমাদের মনের কোনোই পার্থক্য নেই। মালিকের আচরণ প্রতিবন্ধীতায় ওরা যে কষ্ট পেতে পারে সেই ভাবনাটা মালিক ছাড়া কি অন্যকেউ ভেবে দেবে?
সমাজে কত মানুষ আছে যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়েই আনন্দ পান। নিজের সমস্ত আয়-রোজগার এতিম, অসহায় বা বঞ্চিতজনের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করেন। বিনিময়ে কোনো প্রাপ্তির আশা করেন না। তারা লোকদেখানো ধর্মকর্ম নিয়েও মাথা ঘামান না। তবে অন্তরে প্রবল মানবীয় ধর্মবোধকেই লালন করেন। বিশ্বাস করেন, জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। এমন মানুষদের মনমানসিকতার ছিটেফোঁটাও আমাদের এই পরিচিত পরিবারের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে না। নবীর কথা না মেনে নবীর ধর্মাচারী সাজার কোনো মানে আছে?
আমরা কি আর একটু মানবিক হতে পাড়িনা আমাদের বিবেকটাকে জাগ্রত করতে পাড়ব কবে নাকি মানুষ না হয়ে দামি সাহেব-বিবি হয়ে থাকব?
(Visited ২৭ times, ১ visits today)