দেশে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ বুধবার বিকেলে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান।
বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বিমানবন্দরে নামেন। ৫টা ৩৭ মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন।
বিমানবন্দরে বিএনপির চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা হাজির হন।
বিমানবন্দরে মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করিয়েছে। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ভয় পান না। তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শিগগিরই জামিনের জন্য তিনি আদালতে হাজির হবেন।’ মওদুদ অভিযোগ করেন, নেত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর এলাকায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী আসছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। নেতা-কর্মীদের বিমানবন্দরে যাওয়া ঠেকাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণপরিবহনও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
প্রায় তিন মাস পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ঢাকা ও কুমিল্লার আদালত থেকে পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
খালেদা জিয়া গত ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান। প্রায় তিন মাস তিনি সেখানে সপরিবারে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। এ সময় তিনি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নেন বলে দলের নেতারা জানান।
এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের পর থেকে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে বিভিন্ন যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। অনেককেই বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়।
গাড়ি থেকে নেমে যাঁরা ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন, তাঁদেরও স্বস্তি মেলেনি। ফুটপাথেও ছিল হাজারো মানুষের ভিড়। এক হাতে বড় ব্যাগ আর অন্য হাতে চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী আনসার আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘বিকেল তিনটার সময় আবদুল্লাহপুর থেকে রওনা দিয়েছি। কোনো বাস না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছি। কারণ রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। যানবাহন আটকে আছে। আমি ক্যানসারের রোগী। ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম বরিশাল থেকে। উত্তরায় ডাক্তার দেখিয়ে আজ আমার বরিশাল ফেরার কথা। রাতে লঞ্চ। টিকিট কাটা আছে। তাই কষ্ট হলেও হেঁটেই যেতে হচ্ছে।’ অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে আনসার আলী বলেন, ‘এই দেশ আমাদের জন্য না। রাজনীতিবিদ আর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এই দেশ।’
আনসার আলী যখন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তখন ছাত্রদলের অর্ধশত মোটরসাইকেলের মিছিল বিমানবন্দরমুখী রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) শাখার নেতা-কর্মীদের ওই মিছিলে অংশ নেওয়া সবার সবার পরনে ছিল সাদা রঙের টিশার্ট। টিশার্টের পেছনে লেখা ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’। এই মিছিলের পেছনে বিপুলসংখ্যক যানবাহন স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই যানজট বিমানবন্দর থেকে হোটেল রেডিসন ছাড়িয়ে বনানী পর্যন্ত চলে যায়।
নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত, কাওলা এলাকায়ও রাস্তার ওপরেই খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আসা বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরর অবস্থান নিতে দেখা নেয়। অনেকেই সড়কের মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। ওই সড়কের দুই পাশেই যানজটের একই চিত্র দেখা যায়। অন্যদিকে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি ছাড়িয়ে যায়।
বিমানবন্দর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবদুল আলীম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন রাস্তার মাঝখানে অবস্থান না নেন। কিন্তু তারা এ কথা আমলে নেয়নি।’