আপাত দৃষ্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ২৭৮ রান স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক সেই স্কোরকে ছেলেখেলা করলেন। প্রথম ওয়ানডেতে হতাশার শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের সিরিজে ১০ উইকেটে তাদের হারালো প্রোটিয়ারা। ৪২.৫ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ২৮২ রান করে স্বাগতিকরা।
মাশরাফি মুর্তজা, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেনের সঙ্গে অভিষিক্ত মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের পেস কোনও ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারেনি। এমনকি সাকিব আল হাসানও এদিন ছিলেন নিষ্প্রভ। তাদের সঙ্গে বোলিং আক্রমণে মাহমুদউল্লাহ ও নাসির হোসেন যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই ফিরেছেন খালি হাতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ে জয় পায়। এর আগে প্রথমবার ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার দিপক চোডাসামা এবং কেনেডি ওটিয়েনো বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। ওটাই ছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বড় রানের জুটির রেকর্ড। যে রেকর্ড কিম্বার্লিতে ভেঙে ফেললেন ডি কক ও আমলা।
টেস্ট সিরিজে বাজে ফর্মে থাকা ডি কক শুরু থেকে খেলেছেন দেখেশুনে। ৫৬ বলে প্রথম পঞ্চাশের দেখা পান এ ওপেনার। সেটাকে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি বানিয়েছেন ১০০ বল খেলে। তবে ব্যাটে-বলের হিসাবে ডি ককের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন আমলা। ৪৮ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরি পেতে খেলতে হয়েছে আরও ৫১ বল। ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরি আমলা পেয়েছেন ৯৯ বলে। ডি কক ১৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ১৪৫ বলের ইনিংস সাজানো ২১ চার ও ২ ছয়ে। ১১২ বলে ৮ চারে ১১০ রানে খেলছিলেন আমলা।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে আসে সেঞ্চুরি। তার ঝলমলে ইনিংসে প্রোটিয়াদের ২৭৯ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ২৭৮ রান করে সফরকারীরা। একদিনের ক্রিকেটে এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। ২০০৭ সালের এপ্রিলে ৮ উইকেটে ২৫১ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।।
কিম্বার্লিতে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। আগেই ব্যাটিং-বোলিংয়ের দুই শক্তির জায়গা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল ইনজুরিতে তামিম ইকবাল ও মোস্তাফিজুর রহমান ছিটকে পড়ায়। উদ্বোধনী জুটিতে এদিন ছিলেন ইমরুল কায়েসের সঙ্গে লিটন দাস। বেশ ধীর শুরুতে বাংলাদেশ প্রথম পাওয়ার প্লেতে হারায় এক উইকেট, করে ৪৪ রান। ৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে কাগিসো রাবাদার বলে। দ্বিতীয় স্লিপে দারুণ লেন্থের বলে লিটনকে ২১ রানে তালুবন্দি করেন ফাফ দু প্লেসিস।
দ্বিতীয় জুটিতে ইমরুল খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি সাকিব আল হাসানকে। যোগ হয় মাত্র ২৪ রান। ১৪তম ওভারে প্রিটোরিয়াসের বলে ফাইন লেগে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে হাল্কা টোকা দিয়েছিলেন। ঠিকমতো শট নিতে না পারায় বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে। ৪৩ বলে ৪ চার ও এক ছয়ে ৩১ রান করেন ইমরুল।
৬৭ রানে দুই উইকেট হারানোর পর খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল সফরকারী দল। সাকিব ও মুশফিকের জুটি সেটা কাটিয়ে দলে স্বস্তি ফেরান। তাদের ৫৯ রানের জুটিতে ভর করে দলীয় শতক পূরণ করে বাংলাদেশ।
সাকিব বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ২৯ রানে আউট হওয়ার আগে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ক্লাবে জায়গা করে নেন সাকিব। মাত্র ১৭৮ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে কম সময়ে এই রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার, যেখানে কেবল আছেন আর মাত্র চারজন- পাকিস্তানের আবদুল রাজ্জাক ও শহীদ আফ্রিদি, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া। ইমরান তাহিরের শিকার হন সাকিব।
সাকিব বিদায় নিলে মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে ৬৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। তুলে নেন বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। একই সঙ্গে আক্রমণাত্মক ছিলেন স্বাগতিক বোলারদের ওপর। অপর প্রান্তে মাহমুদউল্লাহ বেশি দূর যেতে পারেননি, ২৭ বলে করেন ২৬ রান। প্রিটোরিয়াসের বলে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। উঠিয়ে মারতে গিয়েই ধরা পড়েন ডেভিড মিলারের হাতে।
মুশফিকের সেঞ্চুরির আগেই সাজঘরে ফেরেন সাব্বির রহমান (১৯)। আগ্রাসী খেললেও রাবাদার বলে তালুবন্দী হন তিনি। মুশফিক তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পান ১০৮ বলে ১০ চার ও ২ ছয়ে। তিনি ১১৬ বলে ১১০ রানে অপরাজিত থাকলেও রাবাদা তার শেষ দুই ওভারে নাসির হোসেন (১১) ও সাইফউদ্দিনকে (১৬) ফেরালে বাংলাদেশের রানের গতি কমে যায়।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করা রাবাদা প্রথম ওয়ানডেতেও দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার। ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। প্রিটোরিয়াস পান দুটি উইকেট।
১৮ অক্টোবর পার্লে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ। সিরিজে টিকে থাকতে ওই ম্যাচ জিততেই হবে মাশরাফিদের।