রির্পোটঃঅনলাইন ডেস্ক.
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে দক্ষিণখানের আশকোনা হজক্যাম্প সংলগ্ন ‘সূর্য ভিলা’য় অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালানো হয়।রথমে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। মধ্যরাত থেকেই এক প্রবাসীর মালিকানাধীন ওই তিনতলা বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে তাদের সঙ্গে এপিবিএন ও ডিএমপির উত্তরা বিভাগের পুলিশ সদস্যরাও যোগ দেন।
বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিদের আস্তানা রয়েছে, এমন সন্দেহের কথা জানিয়ে বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটগুলোর বাসিন্দাদের সকালে বের করে আনা হয়।ঘটনাস্থলের সামনের সড়কে ভিড় করেন সাধারণ মানুষও। ছবি: ফোকাস বাংলাএ সময় ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়িটিতে নব্য জেএমবির শীর্ষ এক নেতা রয়েছেন। আছেন কয়েকজন নারীসহ একাধিক জঙ্গি। তাদের কাছে শক্তিশালী গ্রেনেড রয়েছে। তবে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু শরীরে গ্রেনেড বেঁধে প্রতিরোধের ঘোষণা দিচ্ছেন তারা।হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানানো হলে সকাল সাড়ে নয়টার পর জঙ্গিনেতা জাহিদের স্ত্রী, মেয়েসহ চারজন আত্মসমপর্ণ করেন।
এরপর ১০টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনাস্থলে আরও তিনজন নারী জঙ্গি রয়েছেন। তাদেরও ধরা দিতে আহ্বান জানায় পুলিশ।বেলা একটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, এক নারী ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান। আত্মঘাতী ওই নারী মারা যান ঘটনাস্থলেই, গুরুতর আহত হন তার কোলে থাকা চার বছর বয়সী একটি শিশু।আহত শিশুটিকে তাৎক্ষণিকভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে বেলা দুইটার দিকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক জানান, শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। আজই তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হবে। তার নাড়িভুঁড়ির কিছু অংশ বের হয়ে এসেছে। সারা শরীরে স্প্রিন্টারের আঘাতের পাশাপাশি প্রায় অচেতন ওই শিশটির মাথা, হাত ও পায়েও ক্ষত রয়েছে।অন্যদিকে বেলা একটার পর থেকেই ঘটনাস্থলে থেকে থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়।এক পর্যায়ে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালানো বাড়িটির প্রবাসী মালিকের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, মো. ইমতিয়াজ আহমেদ পরিচয় দিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর একব্যক্তি নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিতে আসেন। তখন ওই ব্যক্তি নিজেকে অনলাইনে ব্যবসা করেন বলে পরিচয় দেন। পরে ৩ সেপ্টেম্বর পরিবার নিয়ে তিনি বাসায় ওঠেন।বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।দীর্ঘ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অভিযানে জঙ্গি কাদেরীর ছেলেও আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন’।‘বাসাটির ভেতরে অসংখ্য তাজা গ্রেনেড, বোমা পড়ে আছে। তাই অভিযান পরিসমাপ্ত হলেও ভেতর থেকে এগুলো পরিষ্কার করার ও আলামত সংগ্রহের কাজ চলবে,’ জানান মন্ত্রী।
তবে সন্ধ্যার দিকে জঙ্গি আস্তানার ভেতর থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ স্থগিত করা হয়। কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার (ডিসি) মইদুল ইসলাম খান জানান, ভেতর থেকে গ্যাসের গন্ধ বের হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। ঘরে বিস্ফোরক থাকায় অন্ধকারে কাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আজ স্থগিত করা হয়েছে।তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে বলে জানান তিনি।