বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা আজ শুরু হয়েছে।
এবারে পূজা হচ্ছে দেশজুড়ে তিনহাজারের বেশি মন্ডপে আর এ পূজাকে বর্ণাঢ্য করতে পূজামন্ডপগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রতিমা আর মন্ডপগুলোতে দেখা যাচ্ছে নান্দনিকতার ছাপ।
মন্দির ও মন্ডপগুলোতে দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তার নানা আয়োজন।
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজনের সূচনা হলো আজ।
উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, সঙ্গে ঢোলের বোল আর মাতৃবন্দনার মাধ্যমে পুজার মন্দির আর মন্ডপগুলোতে নানা আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিয়েছেন ভক্তরা।
ঢাকার মিরপুরে কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত কয়েকজনের কাছ প্রশ্ন করেছিলাম, এবার উৎসব হচ্ছে কেমন?
জবাবে সুজিত কুমার রায় নামে একজন বলেন, “এবারের উৎসব ব্যাপকতা বেশি। অন্য বারের তুলনায় পুজাও বেশি হচ্ছে। চাকচিক্যও বেশি”।
একজন নারী বলেন,”দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় পূজা। আজ বেলবরণ পুজো। তাই দেখতে আসছি”।
আরেকজন বলেন, “মন্ডপে মন্ডপে আনন্দ করছি। সারাবছর যাতে এ আনন্দ করতে পারি”।
আবার কেউ কেউ বলছেন, এবার পূজামন্ডপ আর মন্দির সাজসজ্জায় ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
“আলোকসজ্জা ও প্রতিমার দিক থেকে অন্যবারের চেয়ে এবার আকর্ষণীয় করা হয়েছে। ভক্ত সমাগমও অনেক বেশি হবে বলে আশা করছি”।
পুজার আয়োজকদের একজন সুকুমার শর্মা বলছেন,” এ পূজার বিশেষত্ব হলো সার্বজনীনতা, বাঙালি সংস্কৃতির মিলনমেলা। ধর্ম পালন করি আমরা হিন্দুরা। কিন্তু উৎসব সবার”।
মরিপুর এ মন্দিরের মতোই প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে পুজার কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকার মন্দিরগুলো। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অসিম কুমার রায় শিশির বলছেন এবারে নির্বিঘ্নেই উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। আর এজন্য প্রশাসনের বাইরে তারা নিজেরাও কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “এবার তিনহাজারের বেশি পুজো হচ্ছে সারা দেশে। ঢাকায় হচ্ছে ২৩১টি। আশা করি সুন্দরভাবে করবো। প্রশাসনও সহায়তা করছে। তারপরেও শংকা আছে। নিজেরাও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছি। সব মনিটরিং করছি”।
ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় দুর্গাপূজায় ব্যাপক আয়োজন হয়ে থাকে তার একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় বাগেরহাট জেলা। ছ’শোর বেশি পূজামন্ডপ তৈরি হয়েছে এবার সেখানে। এর মধ্যে একটি মন্দিরেই তৈরি হয়েছে ছ’শো ৫১টি প্রতিমা। এর আয়োজক লিটন শিকদার বলছেন রামায়ণ আর মহাভারতের নানা উপাখ্যানের আদলে এসব প্রতিমা তৈরি করেছেন তারা।
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ যারা দেব দেবী সম্পর্কে জানেনা তাদের কাছে সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করি আমরা। এখানে শুধু হিন্দু ধর্মের নন, সবাই মিলে উৎসবে সামিল হয়। সপ্তমী, অষ্টমী , নবমীতে দশ লাখের বেশি মানুষ এখানে সমবেত হয়”।
হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী কাল বুধবার দেবীর আগমন ঘটবে আর শনিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
তাদের বিশ্বাস, এবারের উৎসব বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বন্ধন আরও জোরদার করতে ভুমিকা রাখবে।