ভয়াবহ ভূমিকম্পে যেন মৃত্যুপুরীর রূপ ধারণ করেছে মেক্সিকো। মঙ্গলবার ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মেক্সিকো সিটি, পুয়েবলা, মেক্সিকো ও মোরেলসসহ আশেপাশের এলাকা। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২১৬ জন। এর মধ্যে বাচ্চাদের একটি স্কুলের ২২টি শিশু নিহত হয়েছে। বাকি কমপক্ষে ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে। ধসে পড়েছে বহু ভবন। ২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র যেভাবে গলে নিচের দিকে পড়ে গিয়েছিল, অনেকটা সেরকমভাবে ধসে পড়তে দেখা যায় অনেক ভবন। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকরা পড়ে আছেন বহু মানুষ। তাদের পরিণতি কি কেউ বলতে পারছেন না। ফলে নিহতের সংখ্যা অনেক বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সান হুয়ান রাবোসো থেকে ২.৮ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। ভূমিকম্প আঘাত হানলে মেক্সিকো সরল দোলকের মতো দুলতে থাকে। মুহূর্তেই ধসে পড়ে অনেক ভবন। এ সময় শহরের আকাশে ধসে পড়া ভবনগুলো থেকে উত্থিত ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট এনরিকো পেনা নিয়েতো বলেছেন, মেক্সিকো শহরে শিশুদের একটি স্কুল ধসে পড়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে ২২টি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল কমপক্ষে ৩০টি শিশু। ভূমিকম্পের পর পরই তিনি দেশবাসীকে বলেছেন, আমরা নতুন করে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থার মুখে। এক সপ্তাহের সামান্য আগে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প মেক্সিকোর পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। তাতে কমপক্ষে ৯০ জন নিহত হন। ১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের বার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। ঠিক এদিনই আবার ভূমিকম্প সেখানে আঘাত হানলো। ১৯৮৫ সালের ওই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। ওদিকে মঙ্গলবার ভূমিকম্পের পর হাজার হাজার সেনা সদস্য, উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিক লোকজনকে লাগানো হয়েছে উদ্ধার অভিযানে। তারা বিধ্বস্ত ভবনগুলোর বিশাল সব কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষ সরাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছিলেন। তাদের কেউ বালতি ভরে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নিচ্ছেন। যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে অন্য কেউ একজন তার নাম ঘোষণা করছেন। এক পর্যায়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শব্দ শোনা যায়। এ সময় উদ্ধারকর্মীরা সবাই নীরব হয়ে যান। তবে ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে নাকি রাত নামার কারণে স্থগিত করা হয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। দেশটির সবচেয়ে ব্যস্ত শহর মেক্সিকো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বাড়িঘরের জানালা ভেঙেচুরে এসে পড়েছে রাস্তায়। কোনো বাসার কয়েক তলা ভেঙে পড়ে আছে রাস্তার ওপর। কয়েক হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। তার ওপর দেখা দিয়েছে বড় আকারে গ্যাস লিক। এতে আতঙ্ক বহুগুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো হেলে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষের ওপর। রাস্তাগুলো যেন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপের ভাগাড়ে। ফলে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলেন প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক। মেক্সিকো সিটি ও আশপাশের রাজ্যের সব সরকারি বেসরকারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আউরেলিও নুনো টুইটে বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব স্কুল বন্ধ থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে মেক্সিকোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, মেক্সিকো সিটির মানুষের ওপর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। আমরা আপনাদের পাশে আছি ও থাকবো। এদিন প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মেক্সিকো সিটিতে অবস্থান করছিলেন নিউ ইয়র্ক সিটির একজন ফটোগ্রাফার আদ্রিয়ান উইলসন। তিনি বান্ধবীকে নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন একটি হোটেলে। অকস্মাৎ শুরু হয় ভূমিকম্প। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভবনটির মেঝে থত্থর করে কাঁপতে শুরু করে। বিশাল একটি ট্রাক গেলে যেমন কাঁপে তেমনি ছিল সেটা। এরপর কম্পন আরো বাড়তে থাকে। পুরো রুম, ভবন দুলতে শুরু করে। এতটাই জোরে কাঁপতে থাকে যে এতে দরজা, জানালা সব খুলে যায়। এ সময় তিনি সন্তানদের দেখানোর জন্য অল্প সময়ের একটি ভিডিও ধারণ করেন। তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি একটা রোলার কোস্টার ছিল যেন। আমি বাইরে তাকালাম। দেখলাম হেলিকপ্টার। জ্বলছে ভবন। ধসে পড়েছে অনেক ভবন।