অনলাইন ডেস্কঃ
মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এবার প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উৎসব না করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এবারের ফানুস উৎসবের অর্থ কক্সবাজারে বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়
লিখিত বক্তব্যে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের মুখ্য সমন্বয়ক অশোক বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ বছর আপামর মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদ করছে, তারই ধারাবাহিকতায় তারা এবার প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উত্তোলন থেকে বিরত থাকবে।”
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা, যাতে কঠিন চীবর দানসহ ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তিথি অনুযায়ী আগামী ৫ অক্টোবর এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বছর দিনটিতে ফানুস উত্তোলনের ধর্মীয় আচার থেকে বিরত থাকতে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের আহ্বায়ক সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
মিয়ানমারের চলমান ঘটনাবলী গৌতম বুদ্ধের অহিংস বাণীর ‘পরিপন্থি’ বলেও মনে করেন সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের নেতারা।
রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরু বলেন, “আমরা বৌদ্ধধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অফ বুড্ডিস্টসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
“আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে তাদের অনুরোধ জানিয়েছি। বাংলাদেশের শান্তিকামী জনতার সাথে আমাদেরও দাবি, মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ হোক।”
তিনি জানান, বাংলাদেশের সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে সে দেশের সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমার দূতাবাসের অনুমতি পেলে তারা এই কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে জানান শুদ্ধানন্দ মহাথেরু।
এর আগে রোহিঙ্গাদের উপর ‘অমানবিক নির্যাতনের’ প্রতিবাদে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। সে মানববন্ধন থেকে তারা অভিযোগ করে, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এরপর দিনই রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী হামলা চালাতে যায় বলে অভিযোগ করেন বৌদ্ধ সমাজের নেতারা। যশোরে বেনাপোলে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নিগ্রহের খবরও আসে তখন।
সেদিন থেকে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারসহ বাসবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার, উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর, নর্দা, মিরপুর এবং আশুলিয়ার বৌদ্ধ মন্দিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছে।
১০ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ মিয়ানমার দূতাবাসে এক স্মারকলিপি পেশ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।