আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে প্রলয়ঙ্করী হারিকেন ‘ইরমা’র তাণ্ডবে পিছিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের মহাকাশযাত্রা।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নামে ওই উপগ্রহটির মহাকাশযাত্রার কথা ছিল। পিছিয়ে যাওয়ার কথা রটে গেলেও ওই প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মহম্মদ মেজবাহজামান অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমাদের তেমনই আশঙ্কা। তবে এখনও কিছুই নিশ্চিত হয়নি। ‘কোরিয়াস্যাট’ সহ কয়েকটি উপগ্রহের উৎক্ষেপণের সময়সূচির (সিডিউল) রদবদল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলার সময় আসেনি এখনও।’’
উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য লঞ্চপ্যাড। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশের প্রথম উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। কিন্তু ‘ইরমা’র দাপটে আমেরিকার ফ্লোরিডায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দরুণ উপগ্রহটির উৎক্ষেপণে দেরি হবে বলেই খবর। বেসরকারি মার্কিন মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’-এর ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে চাপিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর মহাকাশযাত্রার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ হারিকেনে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে উপগ্রহের লঞ্চপ্যাড দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাই ‘স্পেস এক্স’-এর তরফে ঢাকাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর উৎক্ষেপণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের আগে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ও বুলগেরিয়ার দু’টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না বলে গত বুধবার জানিয়েছিলেন মহম্মদ মেজবাহজামান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’কে যদি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকেই মহাকাশে পাঠাতে হয়, তা হলে তার জন্য আরও দু’মাস সময় বেশি লাগবে বলে ‘স্পেসএক্স’-এর তরফে জানানো হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প’ কার্যালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ি, ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফেসিলিটিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। উপগ্রহটির কাজকর্ম পরখ করেও দেখা হয়েছে। বিশেষ কার্গো বিমানে চাপিয়ে উপগ্রহটিকে কেপ ক্যানাভেরালের লঞ্চ-সাইটে পাঠানোর কথা ছিল সেপ্টেম্বরের গোড়ায়।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার একটি বিশেষ কমিটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষপণের জন্য স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়। ওই বছরের নভেম্বরে স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে থেলিস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। প্রাথমিক ভাবে পাঁচ বছরের ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উপগ্রহ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এ রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। যার মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ডের এবং ১৪টি সি-ব্যান্ডের। ওই ট্রান্সপন্ডারগুলির মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। উপগ্রহটির গ্রাউন্ড স্টেশন বানানো হচ্ছে গাজিপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায়।