বৃহস্পতিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

পদ্মাপাড়ের নায়করাজ আপনাকে ভুলব না

প্রতিবেদক
alltimebdnews24 com
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭ ১০:৫৩ অপরাহ্ণ

কলামিস্টঃ আর.এম।

এখন সিনেমা হলগুলো খালি পড়ে থাকে। একসময় কত নামের সিনেমা হল ছিল।  আজ এগুলো উধাও। এখন দেখা যায় কোনো কোনোটা গুদাম; কোনোটি এখন  কাপড়ের দোকান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস। আমাদের সময় এসব হল ছিল বিনোদনতীর্থ। মহল্লায় বাজারে হাটে রঙিন আর সাদাকালো পোস্টারে জ্বলজ্বল করা মুখ। এঁরা আমাদের সিনেমার নায়ক-নায়িকা। এঁদের মতো পোশাক বানানো, এঁদের মতো চুলের স্টাইল, এঁদের মতো কথা বলার চেষ্টা করতাম আমরা।

সেই যুগের সাদাকালো সিনেমার উজ্জ্বল তারকাদের তারকা ছিলেন তিনি। তিনি না এলে আমাদের চলচ্চিত্র জগতের নায়ক জায়গাটাই খালি থেকে যেত। বাদবাকি যাঁরা ছিলেন তাদের অবদান বা ভূমিকা খাটো না করেই বলি, আর কেউ নায়ক ছিলেন না আমাদের দেশে। যেমন ধরুন কলকাতা বা ওপার বাংলার কথা। সেখানকার সিনেমা জগত নানা কারণে আমাদের চাইতে এগিয়ে। তারা ইতিহাস ঐতিহ্য চলচ্চিত্রের আধুনিকতায় আমাদের চাইতে অগ্রগামী। সেখানেও আমরা দেখি নায়ক একজনই। তিনি উত্তম কুমার। আর অভিনেতা যদি বলি তো সৌমিত্রের মতো অভিনেতার জন্ম হয়নি খুব একটা।

একই বাস্তবতা আমাদের পদ্মাপাড়ে। নায়ক বলতে আমরা যা বুঝি, নায়ক বলতে যে মানুষটির চেহারা ভেসে ওঠে, যিনি রমনীমোহন, যিনি পর্দায় আসলেই নারী পুরুষের মনে দোলা দেন তিনিই রাজ্জাক।

কৈশোরে সাদাকালো যুগে তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর আকর্ষণে তিনি নায়িকাদের চাইতেও এগিয়ে ছিলেন। কবরী যত দর্শক টেনেছেন তার চাইতে অধিক টানতেন রংবাজ রাজ্জাক। কখগঘঙ , এতটুকু আশা , আর্বিভাব এর সরল-সহজ প্রেমিক কিংবা দর্পচূর্ণ ছবির চাকরের ছদ্মবেশে মনচুরি করা নায়ক তিনি। হেলেদুলে নেচে নেচে গাওয়া ‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা’ এই নায়ক এসেছিলেন বেহুলার ভেলায়। জহির রায়হানের বেহুলায় তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তারপরও তাতে তিনি ছিলেন শায়িত নায়ক। উঠে দাঁড়ালেন রোমান্টিক ছবির প্রেমিক হিসেবে। স্বাধীনতার পর রংবাজে আবির্ভূত হয়েছিলেন এদেশের বদলে যাওয়া তারুণ্যের প্রতীক হয়ে।

তারপর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আলোর মিছিলের প্রতিবাদী ভাই বা অবুঝ মনের দ্বৈত প্রেমে সফল রাজ্জাক ছড়িবে গেলেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

একটা কথা মনে রাখা দরকার, মধ্যবিত্তই মূলত সংস্কৃতির ধারক। সেই মধ্যবিত্তের মনে দোলা দেওয়ার মতো কাজ সবাই করতে পারে না। এরা জানে বেশী বোঝে কম। ফলে মানা না-মানার দ্বন্দ্বে থাকে তারা। তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন রাজ্জাক। ম্যাটিনি থেকে নাইট শো হাউসফুল নোটিশের পেছনে দাঁড়ানো এই নায়ক যখন অস্তমিত হতে শুরু করলেন মানুষও আগ্রহ হারাতে শুরু করল সিনেমার প্রতি। মনে আছে সমাধি বা অশিক্ষিত ছবির কথা। সেই গান, সেই সুর, সেই লিপ-মিলানো আজ আর চোখে পড়ে না।

যেসব গান কিংবদন্তী হয়ে আছে তার বেশীরভাগ সার্থকতা পেয়েছে রাজ্জাকের কারনে। মাহমুদুন্নবীর গাওয়া সেই গান ‘আয়নাতে ওিই মুক দেখবে যখন”এর কথা ভাবুন। সুদর্শনা শবনম শুনছেন আর দু একটা শব্দ করছেন মাত্র। পুরোটা রাজ্জাকের কণ্ঠে গাওয়ার অমলিন স্মৃতিতে এখনও বেঁচে আছে। এমন গান আর কখনও হবে কিনা জানি না।

মানুষের জীবনে অমোঘ অনিবার্য সত্য মৃত্যু। পরিণত বয়সে তিনি বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর কীর্তি। অনেকে হয়তো জানেন না তাঁর পরিবারের ছবি-সম্বলিত একটি ভিউকার্ড আশির দশকে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যেখানে তিনি তিন পুত্র ও দুই কন্যাসহ স্ত্রী নিয়ে বসে আছেন। এই ভিউকার্ড দিয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টসের ব্যবসার শুরু। তারা বায়তুল মোকাররমের সামনে এর প্রচার-প্রসার শুরু করে আজ শিল্পপতি।

এটা যেমন ব্যবসার দিক আরেকটা দিকের কথাও ভাবুন। তাঁর মতো নায়িকাদের সঙ্গে নিবিড় হতে পেরেছে কেউ? সুচন্দা সুজাতা শাবানা ববিতা সবাইকে কেমন আপন করে বুকে টেনে নিয়ে প্রেমের আভিনয় করতেন। দেখে মনেই হত না সিনেমা দেখছি। এখন বুঝি এর শক্তি ছিল তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা। কোনো গুজব স্ক্যান্ডাল বা অপপ্রচার তাঁকে ছুঁতে পারেনি। পরিবার অন্তপ্রাণ রাজ্জাক ছিলেন ঘরমুখী। যার ঘর ঠিক নেই যার চরিত্র নড়বড়ে সে যত উপরে উঠুক পতন তার অনিবার্য। সেটা হয়নি বলেই তিনি সারাজীবন তারা হয়ে আকাশে বিচরণ করতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশে বলে না, দুনিয়ার প্রায় সবদেশে এখন সিনেমা জগতে এক ধরনের বন্ধ্যা সময়। হলগুলো খালি। মাছি উড়ছে। কিন্তু এর ভেতরেও রমরমা চলছে বলিউড। হলিউডকেও দমানো যায়নি। প্রযুক্তির দাপটে ঘরে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ এসেছে বলেই কি সিনেমা হল উঠে যাবে? টিভি কি পেরেছে রেডিও বাতিল করে দিতে?

আমাদের সিনেমাও মরবে না। সিনেমার আবেদন সিনেমাতেই থাকবে। এই সত্য মেনে বলি, রাজ্জাকের আবেদনও কখনও শেষ হবে না।

শুভবিদায় নায়করাজ। আমরা আপনাকে ভুলব না।

(Visited ১১ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - অর্থনীতি