রির্পোটঃঅনলাইন ডেস্ক.
মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যয় চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে পরীক্ষার ফি, ক্লাস ফি ও বিবিধ ব্যয়ের নামে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হবে সব শিশু শিক্ষার্থীকে।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক সম্প্রতি পরীক্ষার ফি বাড়ানো সংক্রান্ত এক পরিপত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।তথ্য মতে, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। শিক্ষক সংকট, জমি দখল, অবকাঠামো সমস্যাসহ নানা জটিলতায় জর্জরিত রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেসব সংকট নিরসন করা না গেলেও এবার প্রাথমিকের সব স্তরের বিদ্যালয় ব্যয় চারগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে।ফলে প্রথম শ্রেণির একজন পরীক্ষার্থীকে আগে যেখানে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার জন্য ৫ টাকা ফি দিলেই হতো, এখন সেই একই পরীক্ষায় ফি দিতে হবে ২০ টাকা। বছরে তিনটি পরীক্ষার জন্য প্রথম শ্রেণির পরীক্ষার্থীকে মোট গুণতে হবে ৬০ টাকা।একইভাবে অন্য শ্রেণিতেও পরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আগে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে একই হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হলেও এবার থেকে এই দুই শ্রেণিতে আলাদা হারে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সম্প্রতি পরীক্ষার ফি বাড়ানো সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রটি ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ফি পরীক্ষা খাতে খরচ করার পর উদ্বৃত্ত থাকলে তা দিয়ে বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর পুরস্কারের কল্যাণে খরচ করা যাবে।এতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া পরীক্ষার ফি’র হিসাব ব্যাংকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি স্কুলেও আলাদা নথি রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ (প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক) পরীক্ষার খরচ মেটানোর জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা বলেছেন, যে হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হতো তাতে খরচ সংকুলান হতো। বাড়ানোর দরকার ছিল না।এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিনিয়ত সব কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে স্কুলের খরচ কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে এক পাতার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। এখন যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে ৮/৯ পৃষ্ঠা লাগে। ফলে আগে যে হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হতো তাতে এখনকার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা ফি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরীক্ষা ফি বাড়ানো হয়েছে।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফি ১০ টাকা। উত্তরপত্র তৈরিসহ বিবিধ খরচ হিসেবে শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফি’র সঙ্গে আরো ৬ টাকা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য দিতে হবে ৪ টাকা। সব মিলিয়ে মোট ২০ টাকা। এভাবে প্রথম শ্রেণিতে বছরে তিন পরীক্ষায় মোট খরচ বেড়েছে ৪০ টাকা। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে বছরে খরচ বেড়েছে যথাক্রমে ৬০, ১০০, ১২০ এবং ১৫০ টাকা।এর প্রয়োজনীয়তা জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী সরকার একদিকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা, অন্যদিকে এর ব্যয় বৃদ্ধি করছে। এটি একটি হাস্যকর বিষয়। তিনি এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেশের সব শিশুকে প্রাথমিক পর্যন্ত বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।