মিয়ানমারের নিপীড়নে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য জরুরি সহায়তা হিসেবে ৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘ।
শনিবার জাতিসংঘের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এই রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশের ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রয়োজন।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এই তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের জীবন বাঁচাতে সহায়তা সরবরাহ প্রয়োজন হতে পারে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৬০ হাজার নতুন আশ্রয় কেন্দ্র, খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও অন্যান্য সেবাও প্রয়োজন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারী ও তরুণীদের জন্য বিশেষজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা জরুরি হয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘের জরুরি রেসপন্স ফান্ড ইতোমধ্যে ৭০ লাখ মার্কিন ডলার অনুমোদন দিয়েছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ও কিছু সংখ্যক হিন্দু বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক; বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিশ্ব নেতাদের ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গারা গণহত্যার মুখে রয়েছেন।
এছাড়া গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাস রাখাইনে জাতিগত নিধনের ঝুঁকি ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কটে তার দেশ সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শনিবার মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা বিপর্যয়ের মাত্রা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। শনিবার দেশটির সুবাংয়ের রয়্যাল মালয়েশিয়ান এয়ার ফোর্স ঘাঁটি থেকে দেশটির এ৪০০এম সামরিক বিমানে ১২ টন ত্রাণ সহায়তা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানান নাজিব রাজাক। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে নাজিব রাজাক রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে অালোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যেকদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে; এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনইইচসিআরের কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী শিবির পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বিভিন্ন দেশ হাত বাড়িয়েছে। তবে এ সহায়তায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার ইউএনএইচসিআরের প্রধান ভিভিয়ান তান বলেন, শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য এখনই ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার প্রয়োজন।
এদিকে, বিশ্বের ১৯০টি দেশে রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশের রেড ক্রিসেন্ট। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়া বিশপ বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সহিংসতায় অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সঙ্কট মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়া সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৫০ লাখ ডলার সহায়তা দেবে।
তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রনেতারা রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির নেত্রী অং সান সু চিকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, শনিবারও কুতুপালং আশ্রয় শিবিরগামী সীমান্তের সড়কে হাজার হাজার রোহিঙ্গা স্রোত দেখা গেছে।