রুপালি পর্দার তারকাদের ব্যক্তিগত আর কর্মজীবন নিয়ে দর্শক-ভক্তদের আগ্রহের কমতি নেই। তারা কী খান, কেমন পোশাক পরেন, অবসর কাটে কীভাবে— এমন নানা বিষয়ে জানতে উদগ্রীব তারা।
একই সঙ্গে তারকাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারেও রয়েছে সাধারণ মানুষের কিউরিসিটি। পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে বড় পর্দার তারকাদের পারিশ্রমিকের আনুমানিক একটি চিত্র পাওয়া গেছে। কার পারিশ্রমিক কত? বিষয়টি জানাচ্ছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ
শাকিব খান
ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক তিনি। বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার ছবিতেও অভিনয় করছেন। ক্যারিয়ারের ১ যুগ পার করে আসা শাকিব খান ১৯৯৬ সালে শুরুতে ১ থেকে ২ লাখ টাকায় কাজ করলেও ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির মাধ্যমে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে দেন। মাঝে কিছুদিন ৪০ লাখ টাকাও পারিশ্রমিক নিতে দেখা গেছে। এরপর সিনেমার মন্দার কারণে ২০১২ সালের দিকে তার পারিশ্রমিক কমে ২০ লাখে চলে এসেছিল। এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা আবারও ভালো হতে চলেছে। শাকিব খানও এই সুযোগে বাড়িয়ে দিয়েছেন নিজের পারিশ্রমিক। এখন আবার তিনি ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি রয়েছে তার যাতায়াত ও আলাদা আপ্যায়নের খরচও।
শাবনূর
১৯৯৩ সালে প্রয়াত নির্মাতা এহতেশামের মাধ্যমে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিতে আসা নায়িকা শাবনূর শুরুতে ১ থেকে ২ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিলেও জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার পারিশ্রমিক। ছবি প্রতি ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই নায়িকা।
মৌসুমী
১৯৯৬ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে রুপালি দুনিয়ায় আসা এই নায়িকা প্রথম ছবিতে ১ লাখ টাকা পেলেও পরে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঙ্ক ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ওঠে। আগের মতো এখন তেমন ছবি করছেন না তিনি। এখন ছবি প্রতি তিনি পারিশ্রমিক নেন ৪ লাখ টাকা করে।
পপি
১৯৯৬ সালে ‘কুলি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আসা এই নায়িকা অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি পারিশ্রমিক ২ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। বর্তমানে অভিনয়ে অনিয়মিত হলেও উচ্চহারে পারিশ্রমিক দাবি করেন পপি।
রিয়াজ
নব্বই দশকে দিলীপ বিশ্বাসের ‘অজান্তে’ ছবির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে বড় পর্দায় আসা এই নায়ক এক সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন এবং ছবি প্রতি ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন।
ফেরদৌস
১৯৯৭ সালে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আসা এই নায়ক শুরু থেকেই দর্শক মন জয় করে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ছবি প্রতি পারিশ্রমিক নেন। কলকাতায়ও প্রায় সমপরিমাণ অঙ্কের পারিশ্রমিকে কাজ করেন তিনি।
অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাসের শুরুটা ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে। ২০০৬ সালে নায়িকা হন ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে। প্রথম দিকে অপু বিশ্বাস ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিলেও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়েছেন। আর এখন নিচ্ছেন ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা। তারও রয়েছে আলাদা যাতায়াত ও আপ্যায়ন খরচ।
মাহিয়া মাহি
২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আসা এই নায়িকা পারিশ্রমিকের দৌড়ে এগিয়ে আছেন অন্য সবার থেকে। ছবি প্রতি পারিশ্রমিক নেন ১০ লাখ টাকা করে। পরিচালক ও প্রযোজক ভেদে অঙ্কটা ওঠানামা করে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার নিয়ম অনুযায়ী এই নায়িকা বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবেই জাজের ছবিতে কাজ করেছেন। তবে প্রথম দিকে জাজের বাইরে যে দু-একটা ছবিতে কাজ করেছেন সেসব ছবিতে মাহি পারিশ্রমিক নিতেন ২ থেকে ৩ লাখ। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখে।
জয়া আহসান
ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় আসা জয়া আহসান প্রথমে বিকল্প ধারার ছবিতে কাজ শুরু করেন। তখন তিনি ছবি প্রতি ১ থেকে ২ লাখ টাকা করে নিতেন। পরে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করলে ছবি প্রতি ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নেন। কলকাতার ছবিতেও তার পারিশ্রমিক প্রায় একই অঙ্কের বলে জানা গেছে।
বিদ্যা সিনহা মিম
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন লাক্স তারকা বিদ্যা সিনহা মিম। এরপর শাকিব খানের সঙ্গে ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর ব্যস্ত হয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। পরিচালক ও প্রযোজক ভেদে ওঠানামা করে তার পারিশ্রমিক। ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছেন তিনি।
জায়েদ খান
২০০৭ সালে মো. হান্নান পরিচালিত ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আসা এই নায়ক প্রথম ছবিতে ১ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিলেও পরে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ছবি প্রতি নেন।
আরিফিন শুভ
নাটক থেকে সিনেমায় আসেন আরিফিন শুভ। এই নায়ক ছবি প্রতি নিচ্ছেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে।
বাপ্পি চৌধুরী
নায়ক বাপ্পির শুরুটা ২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে। শুরুর দিকে তার পারিশ্রমিকও দেওয়া হতো মাসিক বেতনে। জাজ থেকে বেরিয়ে আসার পর এ নায়ক ছবি প্রতি প্রথমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিলেও এখন নিচ্ছেন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে।
সাইমন সাদিক
২০১০ সালে জাকির হোসেন রাজুর ‘জ্বী হুজুর’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক এই নায়কের। প্রথমে ৩ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিলেও এখন নিচ্ছেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে।
ববি
২০১০ সালে ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন ইয়ামিন হক ববি। বেশ কিছুদিন বিরতি দিয়ে ২০১৩ সালে একই পরিচালকের ‘দেহরক্ষী’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিয়মিত হন চলচ্চিত্রে। শুরুতে নামমাত্র পারিশ্রমিক নিলেও ববি এখন সিনেমা প্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।
আঁচল
২০১০ সালে ‘ভুল’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন আঁচল। প্রথমে ২ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিলেও এখন ছবি প্রতি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে।
পরীমণি
২০১৫ সালে শাহ আলম মণ্ডল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এই নায়িকা প্রথম দিকে ছবি প্রতি ২ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক নিলেও এখন নিচ্ছেন ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা করে।
মৌসুমী হামিদ
ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় আসা মৌসুমী হামিদ ছবি প্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মতো পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন।
মিশা সওদাগর
১৯৮৬ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় রুপালি পর্দায় আসা ঢালিউডের শীর্ষ খলনায়ক মিশা সওদাগর। তিনি ছবি প্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন।
অন্যরা
শিপন, ইমন, নিরব, সাগর, নিলয়, শম্পা, আরজু, অমৃতা খান, শিরিন শিলা, নিঝুম রুবিনাসহ অন্যরা নেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক। অন্যদিকে জাজের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন নুসরাত ফারিয়া, জলি, রোশান। জাজ মাল্টিমিডিয়া কর্তৃক বেতনভুক্ত অভিনয়শিল্পী হিসেবে কাজ করেন তারা। তাদের মাসিক হারে পারিশ্রমিক দেয় জাজ মাল্টিমিডিয়া।