আইনজীবীদের সওয়াল সবে শেষ হয়েছে। বিচারক জগদীশ সিংহ মিনিট পনেরোর মধ্যে সাজা ঘোষণা করবেন। ঠিক তখনই অস্থায়ী আদালতের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাম রহিম। মুখে একটাই বুলি, ‘মুঝে মাফ করদো!’
মাঝে কয়েক বার অস্ফুট স্বরে যদিও বলতে শোনা গিয়েছে, আইনের প্রতি তাঁর অগাধ ‘আস্থা’। আদালতের রায় ‘মাথা পেতে’ই নেবেন। তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। কিন্তু, কান্না থামেনি। এমনকী, দু’টি মামলায় ১০ বছর করে সাজা ঘোষণার পরেও আদালত কক্ষ থেকে নাকি বেরতে চাননি তিনি। ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত রাম রহিম গুরমীত সিংহকে প্রায় জোর করেই মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
গত শুক্রবার জোড়া ধর্ষণ মামলায় রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিবিআই-এর একটা অংশের ধারণা, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও রাম রহিমের আশা ছিল প্রভাবশালী হিসাবে তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন। সোমবার রোহতক জেলে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে তাঁর আইনজীবীরা যে ভাবে সওয়াল করেন, তাতেও কিছুটা ভরসা পেয়েছিলেন রাম রহিম। তাঁর আইনজীবীরা এ দিন আদালতের কাছে আর্জিতে জানান, রাম রহিম এক জন সমাজসেবী, সমাজে পরিচিত মুখ। তাঁর যথেষ্ট বয়সও (৫০) হয়েছে। কাজেই, তাঁর ক্ষেত্রে আদালত যেন নরম মনোভাব দেখায়! কিন্তু সিবিআই-এর আইনজীবীরা পাল্টা আর্জি জানান, রাম রহিমের মতো এক জন ধর্ষকের যাবজ্জীবন সাজাই পাওয়া উচিত। তাঁরা বিচারক জদগীশ সিংহের কাছে রাম রহিমের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানান।
এই সময়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম। হাত জোড় করে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁকে মাফ করে দেওয়ার আর্জিও জানাতে থাকেন। কিন্তু, মিনিট পনেরো পর বিচারক যে রায় শোনালেন তাতে কান্না থামেনি রাম রহিমের। বরং তা বেড়েই গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন আদালতের ভিতরে হাজির থাকা এক সূত্র। বিচারক জগদীশ সিংহ তাঁকে দু’টি মামলার প্রতিটিতে ১০ বছরের সাজা দেন। একটি মামলার সাজা শেষে অন্যটির সাজা শুরু হবে। অর্থাত্ সব মিলিয়ে মোট ২০ বছরের সাজা শোনানো হয় তাঁকে। এর পর ফের ভেঙে পড়েন রাম রহিম। আদালত কক্ষ থেকে যখন প্রায় সকলেই বেরিয়ে গিয়েছেন, তখন রাম রহিমকে কার্যত টেনে হিঁচড়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
অথচ, এই রাম রহিম কত নারীর চোখের জলের কারণ হয়ে উঠেছিলেন! সোমবার রায় ঘোষণার পর সে কথাই বলেছেন ‘পুরা সচ্’-এর খুন হয়ে যাওয়া সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতীর ছেলে অংশুল ছত্রপতী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যখন বলতাম, রাম রহিম সিংহ খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত, কেউ আমাদের কথা বিশ্বাস করত না। আদালত আজ সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে।’’
এ দিনের সাজা ঘোষণার পর ফের আলোচনায় উঠে এসেছে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে লেখা ডেরা-‘সাধ্বী’র চিঠি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ধর্ষণে বাধা দিলে রাম রহিম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আমি ঈশ্বর।’’ এর পর নানা যুক্তি, খুনের হুমকি এবং প্রভাবশালী ‘তত্ত্ব’ বুঝিয়ে দিনের পর দিন তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই সাধ্বী দাবি করেছিলেন, তাঁর মতো আরও অনেককেই ‘বাবা’ রাম রহিম নিয়মিত ধর্ষণ করতেন। অনেকে কান্না চেপে রেখে ‘বাবা’র কাছে ধর্ষিতা হতেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে ‘আত্মসমর্পণ’ করতেন। আবার অনেকে সেই কান্না মুছে ‘বাবা’র বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি রেখেছিলেন। এ দিন তারই ফল প্রকাশ পেল। আইনের হাতে বাঁধা পড়ে ধর্ষক ‘বাবা’কেও আজ কাঁদতে হল!