লাইফস্টাইল ডেস্ক:
কী যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে এবার। রোদের তীব্রতায় বাইরে বের হতেই ভয় হয়। কখন না জানি চোখের সামনে ফুটে ওঠে সর্ষে ফুল! এই আশঙ্কা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়, যদি চোখে থাকে সানগ্লাস। ফ্যাশন আর সুরক্ষা, সানগ্লাস ব্যবহারে নিশ্চিত হয় দুটোই।
চোখের সুরক্ষায় রাস্তার ধুলাবালি, পোকা-মাকড় ও সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচায় এই সানগ্লাস। আমাদের দেশে বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল আরোহী তরুণদের জন্য সানগ্লাস অত্যন্ত জরুরি। কারণ বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায় বাতাসের ধুলাবালি এবং পোকা-মাকড় আমাদের চোখে এসে পড়তে পারে। আর এসব ধুলাবালি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে সানগ্লাস। সুজের অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের চোখের কর্নিয়ার ও রেটিনার দারুণ ক্ষতি করে। সানগ্লাস এই অতিবেগুনী রশ্মিকে শুধুমাত্র আমাদের চোখ আসতে বাঁধা প্রদানই করে না বরং তা প্রতিহত করে। তাই সানগ্লাস শুধু ফ্যাশনে নয়, চোখের সুরক্ষায়ও প্রয়োজন।
শুধু তরুণ বয়সীরাই নয় সানগ্লাস আজকাল ব্যবহার করছে সকল বয়সী নর-নারীরা। যদিও তাদের কাছে সানগ্লাসের পছন্দটা একটু ভিন্ন। তারা একই সাথে আরাম, সুরক্ষা ও স্টাইলিশ সানগ্লাস নির্বাচন করে থাকেন। এখন সানগ্লাস আর কালো আর বাদামির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। বাজারে এখন বিভিন্ন রঙের ও শেপের সানগ্লাস পাওয়া যায়। আজকাল পার্পেল, নীল, সাদা, ওয়াটার, কমলা রঙের সানগ্লাস বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। সানগ্লাসের রঙয়ের ভিন্নতার সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন রঙের বর্ডারযুক্ত সানগ্লাস।
ফ্যাশনেবল সানগ্লাস
সানগ্লাসের শেডস, ফ্রেম ইত্যাদি বাছাই করার চেয়েো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের চেহারার সাথে মানানসই সানগ্লাসটি চিনে নেয়া। মুখের ধরণ অনুযায়ী সানগ্লাস পছন্দ বেছে নিতে হবে।
ডিম্বাকৃতি চেহারা যাদের, তাদের মুখে মোটামুটি সব ধরনের সানগ্লাস মানায়। নিত্য-নতুন বিভিন্ন ধরনের সানগ্লাস ব্যবহার করে তাই নিজের চেহারায় আনুন বৈচিত্র। তবে চারকোনা ফ্রেমের সানগ্লাস এমন চেহারায় অধিক সামঞ্জস্য আনবে বলে মনে করি।
যাদের মুখ গোলগাল, তারা এমন ফ্রেমের সানগ্লাস পরবেন যেটা আপনার চেহারা খানিকটা লম্বাটে ও হালকা দেখাবে। চিকন ফ্রেমের সানগ্লাস এক্ষেত্রে না পরাটাই ভালো। চোখের ভ্রু খানিকটা ঢেকে রাখে, এমন সানগ্লাস আপনার গোল চেহারা অনেকাংশেই লম্বাটে দেখাবে। আয়তাকার ফ্রেমের সানগ্লাস পরিধান করাই এক্ষেত্রে শ্রেয়।
চতুর্ভুজাকৃতি চেহারার ফ্যাশনসচেতন পাঠকদের অনুরোধ করবো অতি তীক্ষ্ণ কোণবিশিষ্ট ফ্রেমের কোন সানগ্লাস পরিধান করা থেকে বিরত থাকবেন। ক্লাসিক ডিম্বাকৃতির কিছু সানগ্লাস রয়েছে যা এমন মানুষদের চেহারায় ঠিকঠাক বসে যায়।
লম্বামুখোদের চেহারার সাথে গোলাকৃতির সানগ্লাস ভালো যায়। এছাড়া, চৌকাণ ফ্রেমের সানগ্লাস-ও তাদের ভালো মানাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সানগ্লাসের ফ্রেম খুব ছোট না হয়, যা চেহারায় বেখাপ্পা দেখায়।
যাদের চেহারা কিছুটা ত্রিকোণাকৃতির, তারা ‘ক্যাটস-আই’ গোছের সানগ্লাস ব্যবহারে উপকৃত হবেন। এধরনের চেহারার সাথে মানানসই করতে সানগ্লাসের ফ্রেমের উপরের অংশ সমান্তরাল দেখে পছন্দ করবেন।
ত্বকের সঙ্গে মানানসই সানগ্লাস
ফ্যাকাশে চেহারা যাদের তারা গোলাপি অথবা ব্রাউন শেডের সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। চ্যাপ্টা ফ্রেমের সানগ্লাস ব্যবহারে আপনার চেহারার এমন সমস্যা অন্যদের অনেকাংশে বুঝতে দেবে না। শ্যামলা গায়ের রঙের সাথে স্বচ্ছ ফ্রেম সবচেয়ে ভালো মানায়। যাদের ত্বক খানিকটা বেশি কালো তারা সিলভারের ফ্রেম পছন্দ করবেন।
হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে মানানসই সানগ্লাস
রেশমি ঘন কালো চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে রিম ছাড়া হালকা শেডের সানগ্লাসগুলো। খুব কোঁকড়া চুলে ছোট ফ্রেমের সানগ্লাস ভালো মানাতে পারে যদি তা চেহারার মাপের সাথে খাপ খায়। যারা চুল ছোট রাখেন, তাদের সানগ্লাস বাছাই করার সময় চুলের চেয়ে চেহারার আকৃতির উপরেই অধিক দৃষ্টি দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে কড়া রঙের সানগ্লাস আপনার চেহারায় এনে দেবে সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বের ছাপ।
সানগ্লাস ব্যবহারের সময় মনে রাখা জরুরী
কাজ করা বা কথা বলার সময় চোখের দৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই কথা বলার সময় সানগ্লাস খুলে রাখুন ।অফিসিয়াল কাজে এবং বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হবার সময় একই শেডেড সানগ্লাস ব্যবহার না করে বাছাই করুন মানানসই শেডসের সানগ্লাস ।
নিজের চেহারা বা চুল ঠিক করতে অন্যের সানগ্লাসকে আয়না হিসেবে দেখবেন না এতে আপনার ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ণ হবে ।মার্কেটে ,ক্লাসে বা ইনডোর গেইমসের স্টেডিয়ামে , রুমের ভেতর বা কোন অনুষ্ঠানে সানগ্লাস পরে বসে থাকবেন না যদি না আপনার চোখের কোন সমস্যা থাকে ।
একই সানগ্লাস সবসময় ব্যবহার না করে সময়ের সাথে সানগ্লাস পরিবর্তন করুন ।এতে নিজেকে সবার কাছে আরও আকর্ষণীও করে উপস্থাপন করতে পারবেন ।কাজ ছাড়া সবসময় মাথায় সানগ্লাস পরে রাখবেন না ।
সানগ্লাসের তারুন্যের প্রতীক। সানগ্লাস ছাড়া এ যুগের ফ্যাশন অপূর্ণ ।নিজেকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে মানানসই ফ্যাশন্যবল সানগ্লাসের এর সঠিক ব্যবহার করন ।
কেমন সানগ্লাস পড়বেন
চিকিৎসকের মতে, বাদামি রং এবং বাদামি শেডের সানগ্লাস চোখের জন্য ভালো, আরাম পাওয়া যায়।সানগ্লাসে নীল রংটা এড়িয়ে চলুন।চোখের সমস্যা ব্যতীত রাতে সানগ্লাস এড়িয়ে চলুন। রোদে সানগ্লাস পরে বাড়ি ফিরে চোখে পানির ঝাপটা দিন।খালি চোখে বা সানগ্লাস পরে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
কোথায় পাবেন কেমন দামে
বাংলাদেশর বাজারে দু ধরনের সানগ্লাস পাওয়া যায় ব্র্যান্ড ও নন ব্যান্ড। কয়েকটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের সানগ্লাস হচ্ছে—আরমানি, পুলিশ, ডিএনজি, রে বন, ওকলে, প্যারাডা ইত্যাদি। রে বন ব্র্যান্ডের সানগ্লাস পাবেন ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে, গুচ্ছি পাবেন ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। ব্র্যান্ডের সানগ্লাস পাবেন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি, এলিফেন্ট রোডের অভিজাত শো-রুমে।
বাংলাদেশের সানগ্লাস বাজারের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর রেপ্লিকাই বেশি আনা হয়। পণ্যের মান, ডিজাইন ও মডেল অনুযায়ী ৫শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যাবে এই সানগ্লাসগুলো।
নন-ব্র্যান্ডের চশমাগুলো আসে মূলত চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়া থেকে। এদের মধ্যেও সাফারি, গলফ ভিশন, বেলং ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চশমা ২শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় পাওয়া যাব।
এছাড়াও ফুটপাতে সানগ্লাস পাবেন ৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। তবে মনে রাখতে হবে সস্তা সানগ্লাসগুলো আপনার চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সানগ্লাস কেনার সময় চোখের কথা মাথায় রাখবেন।