যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই বাংলাদেশি প্রাচিতা দত্ত টুম্পা ও ইমতিয়াজ ইকরাম এলিসের মরদেহ জর্জিয়া মর্গ থেকে রিলিজ করা হয়েছে। আদালতের ছাড়পত্র নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে তাদের মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে, গুরুতর আহত ফারজানা সুলতানা টুসির দেহে সফল অস্ত্রপচারের পর তিনি ফ্লোরিডায় নিজ বোনের বাসায় চলে গেছেন। তবে টুসি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
নিহত দুজনই নর্থ ক্যারোলাইনার শারলট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব ডালাসে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএস করছেন টুম্পার বান্ধবী সংগীতা।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ছাত্রাবস্থায় হোস্টেলে এক রুমে তারা চারজন থাকতেন। টুম্পা, সংগীতা, টুসি, তোরা।
সংগীতা বলেন, ‘মনে পড়ে একদিন টুম্পা আলাদা চার খাটকে একত্র করে এক খাট বানিয়ে বলেছিল ‘আমরা সবাই এক’। যদিও আমি সিভিলে ছিলাম। ওরা তিনজন অ্যারোনটিক্যাল ছিল। টুম্পার নতুন জামা পরার প্রচণ্ড শখ ছিল। নিজে সেলাই করে জামা পরা তার শখ ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোবাসত। স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পড়ালেখায় সেরা ছিল।’
ঢাকার ভিকারুন্নেছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজও পড়তেন টুম্পা। সংগীতা জানান, গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছিলেন টুম্পা। রাত জেগে পড়ালেখা করতেন। এমআইএসটিতে ছাত্রাবস্থায় পরীক্ষার আগের দিন রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বেশ মজা করতেন। ২০১৪ সালে প্রাচীতা দত্ত টুম্পা অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন।
এরপর তিনি লেকচারার হিসেবে এমআইএসটিতে যোগ দেন। ২০১৬ আগস্ট মাসে প্রয়াত প্রাচিতা দত্ত টুম্পা, মায়েশা বিনতে মাহমুদ তোরা, সুমাইয়া ফেরদেস ইতি, ফাইরুজ সাকিব তানজিম এক সঙ্গে পিএইচডি করতে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এরপর প্রয়াত প্রাচিতা দত্ত টুম্পা (নথ ক্যারোলাইনা চারলট ইউনিভার্সিটি), মায়েশা বিনতে মাহমুদ তোরা (ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো), সুমাইয়া ফেরদেস ইতি (ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান) ফাইরুজ সাকিব তাজিম (উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি) তে পড়ালেখা শুরু করেন।
ইতোমধ্যে আইএসটি থেকে টুম্পার আরেক বন্ধু ইমতিয়াজ ইকরাম আলী ও পিএইচ ডি করতে নথ ক্যারোলাইনা চারলট ইউনিভার্সিটিতে আসেন। ইমতিয়াজ পরিবারের একমাত্র ছেলে। তার বাবা একজন চিকিৎসক। দীর্ঘ দুবছর হলো যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। তাই মায়ের অনুরোধে আগামী ডিসেম্বরে তার দেশে যাওয়ার কথা ছিল। টিকিট ও কনফার্ম করেছিলেন বলে একাধিক বন্ধু জানিয়েছেন।
ইমতিয়াজের ফেসবুকে তার বন্ধুরা লিখেছেন-ছবিতে যে ছেলেকে সবার প্রথম চোখ পড়বে সেই আমাদের ইমতিয়াজ। কালাসের ফাস্ট বয়, পিএল-এ যার নোট পড়ে আমরা অনেকেই আজ প্রকৌশলী। কমান্ড্যান্ট মেডেল পাওয়া ডিপার্টমেন্টের সবার প্রিয় শিক্ষক (এমআইএসটি) ইমতিয়াজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন।’
ফাইরুজ বলেন, মনে পড়ে, পরীক্ষার আগে টুম্পার হাতের লেখা নোট সবার হাতে-হাতে। কারণ সে ছিল মেধাবী স্টুডেন্ট। টুম্পা সব বন্ধুকে নোট দিত। তার নোট পড়ে আমরা ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। অসাধারণ বড় মাপের এক বন্ধু টুম্পা। এ ক্ষতি পুরো জাতির।
টুম্পার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। টুম্পার বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। একজন বাঙালি মেয়ে হিসেবে নিজেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ অর্জনকে হাতের মুঠোয় আনতে চেষ্টা করেন।