মোঃ ফেরদাউছ সিকদারঃ
জমিজমা সংক্রান্ত ভোগান্তি চরমে পৌছেছে বরিশাল নগরীর কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এ অফিসের ইট পাথরও ঘুষ ছাড়া কিছু বোঝে না। দালাল নির্ভর এ ভূমি অফিসের বারান্দায় কান পাতলেই হাজারো মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন। তার দাবী এখানে ঘুষ কিংবা দালালের কোন স্থান নেই। অথচ সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে একাধিক ভুক্তভোগী তাদের দুর্দশার কথা অকপটে জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ অতিরিক্ত অর্থ (ঘুষ) ছাড়া এই অফিসের পদস্ত কর্মকর্তা – কর্মচারীদের সঙ্গে কোন পরামর্শ বা কথা বলার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এ অফিসে নির্ধারিত কতিপয় প্রভাবশালী দালাল আর ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না। এতে করে চরম হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শত শত সাধারন মানুষদের। দীর্ঘ দিনের রেখে আসা জমি সংক্রান্ত কোন সমস্যা সমাধান করতে এই ভূমি অফিসে ঘুষ দিতে দিতে আজ অনেক পরিবারই নিঃস্ব হয়ে গেছে। আর কতিপয় দালাল সহ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কেউ ঘুষ দিতে অনিহা প্রকাশ করলে নিরাশ হয়ে চলে যেতে হয় বাড়িতে।
সরেজমিনে গতকাল কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কথা হয় কলাডেমা এলাকার মৃধা বাড়ির আব্দুল আলী মৃধার পুত্র মো: হালিমের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৯ আগস্ট কাশিপুর ভূমি অফিসে তিনটি জমির পর্চা উঠানোর জন্য যাই। কিন্তুু ওই অফিসের রাজন দাস (দালাল) নামে এক ভদ্র লোক এসে আমায় পর্চা উঠিয়ে দিবে এ শর্তে ৫শ’ টাকা নেয় এবং বলে আপনি আগামি ২০ তারিখ দেখা করবেন। তবে অফিসে নয় ওই চার দোকানের সামনে। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত দুটি কাগজ দিলেও দালাল রাজন দাস একটি পর্চা দিতে টালবাহানা করে। রাজন আমাকে জানায়, জাহাঙ্গীর স্যারকে খুশি করতে আরও কিছু (ঘুষ) লাগবে।
আরেক ভুক্তভোগী চহটা গ্রামের দুলাল জানান, প্রায় দুই তিন মাস পূর্বে দালাল রাজন জমি কাগজপত্র উঠিয়ে দিবে এমন শর্তে তার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে। যার প্রমান হিসেবে তিনি এ প্রতিবেদককে রাজনের স্বাক্ষর করা একটি নোট বুক দেখান। তিনি বলেন, তিন মাস পর রাজন তাকে জানিয়েছে তার নামে কোন জমি নেই।
সকল জমি সরকার খাসজমি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। রাজনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালাল রাজন ভূমি অফিসের কর্মচারী না হলেও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরের একান্ত লোক হিসেবে চা-পান এনে পরিবেশন করে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি অফিসের এক কর্মচারী জানান, রাজনের ইশারায় এ অফিসে অনেক কিছুই হয়। জাহাঙ্গীর স্যারের ভয়ে কেউ রাজনের কথার প্রতিবাদ করেনা। অপর একটি সূত্র জানায় কাশীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন’র নেতৃত্বেই এই দালাল চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অফিসে কোন দালাল নেই। এব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির বলেন, কোন অফিসে দালাল থাকা দুঃখজনক। তবে তদন্তে যদি অনিয়মের কোন তথ্য প্রমান মেলে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।